নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবৈধ নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছিল ছ’মাস আগে। নোটিস পাঠানো ছাড়া এ পর্যন্ত সে ব্যাপারে আর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি শিলিগুড়ি পুরসভা। কিন্তু আমরি-কাণ্ডের পরে শিলিগুড়ি শহর জুড়ে নার্সিংহোমগুলির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে নেমে সেবক রোডের ওই নার্সিংহোমের ‘বেসমেন্টে’ দাহ্য বস্তু বোঝাই অবৈধ গুদাম গুঁড়িয়ে দিলেন পুর-কর্তৃপক্ষ। নার্সিংহোমটিতে একাধিক অবৈধ নির্মাণ করা হয়েছে বলে এ দিন নজরেও পড়েছে পুর-কর্তৃপক্ষের।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (ট্রেড লাইসেন্স) দেবশঙ্কর সাহা বলেন, “ওই নার্সিংহোমে বেসমেন্টকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। সেখানে নানা দাহ্য বস্তু মজুত রয়েছে দেখে চমকে গিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গেই অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি, সেখানে আরও যে সব অবৈধ নির্মাণ দেখা গিয়েছে, তা ভেঙে দিতে বলা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে সে কাজ না করলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে।” পুরসভা সূত্রের খবর, নার্সিংহোমের ‘বেসমেন্টের’ অবৈধ গুদামে অক্সিজেন সিলিন্ডার, কার্ডবোর্ড, প্লাইবোর্ড, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার-সহ নানা দাহ্য বস্তু মজুত ছিল।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শিলিগুড়ির ওই নার্সিংহোমটি চালু হয় ২০০৪-৫ থেকে। ছ’মাস আগে সেখানে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ ওঠে। পুরসভার এক কর্তার দাবি, “আমরা সে ব্যাপারে নোটিস পাঠালেও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাতে আমল দেননি। কারণ, ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, সে জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিলেন নানা রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা। ফলে, বিশেষ কিছু করা যায়নি। আমরি-র অগ্নিকাণ্ডের পরে ওই নেতারা আর নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে আড়াল করতে আসরে নামার সাহস পাননি।” |
পুরসভার উদ্যোগে শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি নার্সিং হোমের
বেআইনি অংশ ভাঙা হচ্ছে। সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি |
এই দাবি কতটা ঠিক জানতে চাওয়া হলে সরাসরি জবাব দেননি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তিনি শুধু বলেন, “ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে আগে বহু বার সতর্ক করা হয়েছে। ওঁরা শোনেননি। গুরুত্বও দেননি। কলকাতায় আমরিতে যা হয়েছে, তার পরে কোনও ঝুঁকি নেওয়া যায়নি। সে জন্য বেআইনি নির্মাণ
ভেঙে দেওয়া হয়। বাকিটা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নিজেরা না ভাঙলে, আমরা যা করার করব।” শিলিগুড়ির ওই নার্সিংহোমের অন্যতম কর্ণধার সুশান্ত রায় দাবি করেন, ‘বেসমেন্টে’ সাধারণত অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা হয়ে থাকে। কিন্তু সে জন্য তো পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নিতে হয়। তা কি নেওয়া হয়েছিল? সুশান্তবাবু বলেন, “ওই অনুমতির পাওয়ার জন্য আমাদের নার্সিংহোমের পক্ষ থেকে প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী অনুমতির আবেদনপত্র কেন পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরকে দেননি, বুঝতে পারছি না। আমরা সময় চেয়েছি। দ্রুত সব ঠিক করা হবে।”
যেখানে অনুমতি মেলেনি, সেখানে ‘বেআইনি গুদামে’ দাহ্য বস্তু মজুত রেখেছিলেন কেন? সুশান্তবাবুর জবাব, “নার্সিংহোমের কাজ শেষ হয়নি। বেসমেন্ট অস্থায়ী ভাবে ব্যবহার হচ্ছিল।” প্রশাসনের দাবি, শিলিগুড়ির ৫২টি নার্সিংহোমের মধ্যে ৪০টিতে ‘যথাযথ’ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। আর অনেক নার্সিংহোম ‘বেআইনি নির্মাণ’ করে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এ দিন দেবশঙ্করবাবু ও স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী শহরের আরও কয়েকটি নার্সিংহোমে গিয়ে বেআইনি নির্মাণ এবং আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করার ব্যাপারে সতর্ক করেন। ‘শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন’-এর কর্মকর্তা দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের দাবি, “জতুগৃহের চেহারা নিয়েছে শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোম। প্রশাসনের নীরবতার পেছনে কী কারণ রয়েছে তা নতুন সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত। আমরি-কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। না হলে আরও বড় দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হতে পারে আমাদের।” |