আইন বিধানসভায় পাশ হয়ে গিয়েছিল এক বছর আগেই, ২০১০-এর নভেম্বরে। আইন পাশ হওয়ার পরে তার বিধিও বিধানসভায় পাশ করতে হয়। অথচ সে ব্যাপারে গা করেনি স্বাস্থ্য দফতর। বাদ সেধেছিল বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনও। আমরির ঘটনার পর নিজেদের এই গাফিলতি ঢাকতে এ বার সেই ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট’-এর ফেলে রাখা বিধি তড়িঘড়ি বিধানসভায় তোলার নির্দেশ এসেছে মহাকরণ থেকে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনেই ওই বিধি পেশ করা হবে।
আমরি থেকে শিক্ষা নিয়ে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনের নতুন বিধিতে নিয়ম ভঙ্গের শাস্তি যেমন কড়া হচ্ছে, তেমনই রোগী নিরাপত্তা ও অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা সংক্রান্ত নিয়মকানুনও ঢোকানো হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন।
কী থাকছে নতুন বিধিতে? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের বক্তব্য, এত দিন নতুন কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোমকে অনুমোদন দেওয়ার সময় আলাদা করে তার ফায়ার লাইসেন্স দেখত না
স্বাস্থ্য দফতর। ওই সংস্থার বৈধ ট্রেড লাইসেন্স থাকলেই ধরে নেওয়া হত, তার বৈধ ফায়ার লাইসেন্স রয়েছে। নতুন বিধি অনুযায়ী, অনুমোদন পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে আলাদা করে ফায়ার লাইসেন্সও জমা দিতে হবে। পাশাপাশি, মেডিক্যাল বর্জ্য, সাধারণ বর্জ্য সাফ করার সার্টিফিকেট, রেডিওলজি বিভাগের জন্য ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের অনুমোদন পত্রও স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে জমা দিতে হবে।
আমরির ঘটনাতেই আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালের কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাবের বিষয়টি সামনে এসেছে। সেই কথা মাথায় রেখে নতুন বিধিতে হাসপাতালের প্রত্যেক কর্মীর ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থায় ‘মাস ইভ্যাকুয়েশন’ ও ‘মাস ক্যাজুয়ালটি ট্রিটমেন্ট’ বাধ্যতামূলক হচ্ছে। বাধ্যতামূলক হচ্ছে আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ, প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণও। সেই সঙ্গে নিয়ম করা হচ্ছে, কোনও বেসরকারি হাসপাতালে কোনও জরুরি পরিস্থিতি, আগুন, ভাঙচুর, মারামারি, যন্ত্র খারাপ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে, ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনে তৎক্ষণাৎ স্বাস্থ্য দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের তা জানাতে হবে। না জানালে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। এত দিন এই হাসপাতালগুলি থেকে কোনও তথ্যই স্বাস্থ্যভবনে এসে পৌঁছত না। স্বাস্থ্য দফতরও এ বিষয়ে নির্লিপ্ত ছিল। এখন খবর নিয়ে জানা যাচ্ছে, বহু বেসরকারি হাসপাতালেই গত এক বছরে ছোটখাট আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, যা স্বাস্থ্যকর্তারা জানতেই পারেননি।
নতুন বিধিতে বলা হচ্ছে, হাসপাতালের রোগী পরিষেবা বা রোগী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি আছে বা সমস্যা হচ্ছে মনে হলেই এ বার থেকে যে কোনও রোগী বা কর্মী তা ‘গ্রিভান্স সেল’-এ জানাতে পারবেন। এর জন্য ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনে প্রত্যেক বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে এই সেল খুলতে হবে। সেল-এর ভুমিকায় অভিযোগকারী সন্তুষ্ট না-হলে সরাসরি স্বাস্থ্যভবনে অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রত্যেক হাসপাতালের রিসেপশনের দেওয়ালেই গ্রিভান্স সেলের সংশ্লিষ্ট অফিসারের নম্বর লিখে রাখতে হবে। হাসপাতাল কবে লাইসেন্স পেয়েছে, লিখতে হবে তা-ও। |
কড়া বিধি |
• চাই ফায়ার লাইসেন্স |
• বর্জ্য সাফের সার্টিফিকেট |
• পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের অনুমোদনপত্র |
• ভাঙচুর, মারামারি বা যন্ত্র
খারাপ হলে দ্রুত জানাতে হবে |
• অগ্নিনির্বাপণ ও প্রাথমিক
চিকিৎসার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক
|
• খুলতে হবে ‘গ্রিভান্স সেল’ |
• জরিমানা ৫০ হাজার থেকে বেড়ে ২ লক্ষ |
|
স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের কথায়, “খসড়া বিধি তৈরি হয়ে ওয়েবসাইটে দেওয়া ছিল। কিন্তু এত দিন চিকিৎসকদের একাংশের বাধাতেই এই বিধি কার্যকর করা যায়নি। এখন আমরির পর স্বাস্থ্য দফতর আর কোনও বাধাকে পরোয়া করছে না। দ্রুত নতুন বিধি কার্যকর করতে বলা হয়েছে।” নতুন বিধিতে আগের তুলনায় নিয়মভঙ্গকারীদের শাস্তিও বাড়ানো হচ্ছে।
কী রকম শাস্তি থাকছে নয়া বিধিতে?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আগে নিয়ম ভাঙার শাস্তি ছিল ৫০ হাজার টাকার জরিমানা। এখন তা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ২ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও দোষ প্রমাণ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আদায় করা হবে আরও ৫ লক্ষ ক্ষতিপূরণ। অনাদায়ে হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের পরিষেবা প্রদানকারী, মালিক বা ম্যানেজারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতে পারে। এতদিন স্বাস্থ্য দফতর শুধু পুলিশের কাছে নিয়মভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারত। এখন জেলাশাসকও ওই অভিযোগের বিচার করে দোষীকে শাস্তি দিতে পারবেন বলে নতুন বিধিতে বলা হয়েছে।
তবে এই নয়া বিধির হালও আগের নিয়মের মতোই শেষ পর্যন্ত কাগজে-কলমেই থেকে যাবে কি না তা নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি স্বাস্থ্যকর্তারা। |