প্রতিটি জেলায় ‘সুপার স্পেশালিটি’ হাসপাতাল গড়তে প্রয়োজনে পিপিপি মডেলে কাজ করার কথা ভাবছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে উৎসাহিত হয়ে জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে তিনটি অত্যাধুনিক ‘রেনাল ডায়ালিসিস যন্ত্র’ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জলপাইগুড়ির ভূমিপুত্র এক অনাবাসী শিল্পপতি। সারা জীবনের জন্য ওই যন্ত্রগুলির রক্ষনাবেক্ষণের খরচও তিনি দিতে চান বলে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানিয়েছেন কাতারের দোহার বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ী অলক বসু। কিন্তু, প্রায় ৬ মাস হতে চললেও এখনও সরকারি তরফে সদর্থক কোনও সাড়া না-পেয়ে অলকবাবু ক্ষুব্ধ। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রকাস্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন তিনি। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি পৌঁছলে অনুমতি পেতে দেরি হবে না বলে তাঁর দৃঢ় ধারনা।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত জুলাই মাসে তিনি প্রথম একটি চিঠি পাঠিয়ে স্বাস্থ্য দফতরকে ওই ডায়ালিসিস যন্ত্র পাঠানোর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয় যে অন্তত তিনটি ডায়ালিসিস যন্ত্র ছাড়া হাসপাতালে ডায়ালিসিস ইউনিট চালু করা সম্ভব নয়। এর পরে ফের চিঠি পাঠিয়ে অলকবাবু তিনটি যন্ত্র পাঠানোর ব্যাপারেই আগ্রহ প্রকাশ করেন। ডায়ালিসিস ইউনিট চালু করা হলে রক্তের জন্য পৃথক একটি ইউনিট তৈরির জন্য অতিরিক্ত ১২ লক্ষ টাকাও দেবেন বলে জানান। জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বলেন, “অলক বসু নামে এক শিল্পপতি জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে তিনটি ডায়ালিসিস যন্ত্র দিতে চেয়েছেন। যন্ত্রগুলির সঙ্গে রক্তের প্ল্যান্ট বসানোর জন্য ১২ লক্ষ টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছি। আরও কয়েকটি বিষয় বলা হয়েছে। পাশাপাশি, ওই শিল্পপতির প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি ডায়ালিসিস যন্ত্রের দাম প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে কোনও ডায়ালিসিস যন্ত্র নেই। ফলে এই হাসপাতালে কিডনির রোগে আক্রান্তদের ডায়ালিসিস করানোর ব্যবস্থা নেই। জলপাইগুড়ির বেসরকারি নার্সিংহোমগুলির ক্ষেত্রেও চিত্রটা একই রকম। ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হলে রোগীদের শিলিগুড়ি অথবা কলকাতায় যেতে হয়। ফলে বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের কাছেই ব্যয়বহুল ডায়ালিসিসের সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা অধরাই রয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতি অলকবাবুর প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসার মান অনেকটাই উন্নত হবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে সাড়া না-পেয়ে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই শিল্পপতি। জেলাশাসকের তরফে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়। জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “উনি আমার কাছে এসেছিলেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। সমস্যা হল ওই ধরনের যন্ত্র চালানোর জন্য উপযুক্ত টেকনিশিয়ান নেই। স্বাস্থ্য সচিবকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে একজন টেকনিশিয়ান পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।” |