নিয়ম রয়েছে অনেক। আবার সেই নিয়মকে তোয়াক্কা না করার অভিযোগও রয়েছে ভুরি ভুরি। স্বাস্থ্য দফতর বা জেলা প্রশাসনের কর্তারা এ সব জানেন না এমন নয়। অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতরের এক শ্রেণির কর্মী ও আধিকারিকদের সঙ্গে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের অশুভ আঁতাতেই অনিয়ম চার দিকে।
এ ভাবেই নতুন নার্সিংহোমের অনুমতি মেলে, পুরনো নার্সিংহোমের লাইসেন্স নবীকরণ হয়ে যায় কোনও কিছু না দেখেই। ‘আমরি’র ঘটনার পর রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। নার্সিংহোমগুলি সরকারি নির্দেশিকা মানছে কি না তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার এ নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত।
জেলাশাসক বলেন, “প্রতিটি নার্সিংহোমই খতিয়ে দেখা হবে। কোনও নার্সিংহোম যদি সরকারি নির্দেশিকা না মানে তাহলে সেই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “এ বার ব্লক মেডিক্যাল অফিসারদেরও (বিএমওআইচ) নার্সিংহোম পরিদর্শনে পাঠানো হবে। বেনিয়ম মানা হবে না।” জেলাশাসক জানান, স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি প্রশাসনের আধিকারিকেরাও সরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম পরিদর্শনে যাবেন।
মেদিনীপুর শহরে রয়েছে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। খড়্গপুর শহরে রয়েছে মহকুমা হাসপাতাল ও হিজলি গ্রামীণ হাসপাতাল। ঘাটাল ও ঝাড়গ্রামেও মহকুমা হাসপাতাল রয়েছে। ঝাড়গ্রাম হাসপাতালকে আবার জেলা হাসপাতালে উন্নীতকরণের চেষ্টা চলছে। তারই সঙ্গে বিভিন্ন ব্লকে হাসপাতালের উন্নয়ন করার জন্য কোটি-কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও জেলা জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম। রমরমিয়ে চলছে বেসরকারি প্যাথোলজি সেন্টারও। ওই সব হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলি সরকারি বিধিনিষেধ মানছে না বলেই অভিযোগ।
বেসরকারি ওই সব নার্সিংহোমগুলিতে প্রয়োজনীয় রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার নেই, নেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, আইসিসিইউ। ভেন্টিলেশন রয়েছে দাবি করে রোগীর কাছ থেকে মোটা টাকা নেওয়া হলেও বাস্তবে তার কোনও অস্তিত্ব নেই বলে অভিযোগ। প্যাথোলজি কেন্দ্রে প্যাথোলজিস্টের নাম থাকলেও সাধারণ কাউকে দিয়েই পরীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে একই ব্যক্তি বিভিন্ন সেন্টারে পরীক্ষা করালে পরীক্ষার রিপোর্টেও নানা তথ্য আসে। অভিযোগ, এক দিনে একগুচ্ছ কাগজে সই করে বেরিয়ে যান প্যাথোলজিস্ট। রিপোর্ট না দেখেই।
এমনকী চিকিৎসকদের ডিগ্রি নিয়েও নানা অভিযোগ ওঠে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এক জন এমবিবিএস চিকিৎসক নিজেকে ‘চেস্ট স্পেশালিস্ট’ হিসাবে দাবি করে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা করে গিয়েছেন। অভিযোগ আসায় তদন্তও হয়। তারপর তিনি প্রেসক্রিপশন থেকে ‘চেস্ট স্পেশালিস্ট’ লেখাটি তুলে দেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের অবশ্য যুক্তি, দফতরে কর্মী সঙ্কটের কারনেই তদন্তের জন্য সময় দেওয়া যায়নি।
অনেক সময় অলিগলিতেও নার্সিংহোম তৈরির অনুমতি দিয়ে দেয় পঞ্চায়েত ও পুরসভা। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “এ বার সমস্ত পঞ্চায়েত ও পুরসভার কাছেও আবেদন জানানো হবে যাতে অলিগলিতে নার্সিংহোম তৈরির জন্য ট্রেড লাইসেন্স না দেওয়া হয়।” আবার সেই সব নার্সিংহোম এমন জায়গায় রয়েছে যেখানে দমকল ঢোকার ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। কারণ, অপরিসর রাস্তা। পর্যাপ্ত জলও মিলবে না। ফলে কোনও সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে চরম সমস্যায় পড়তে হবে। জেলাশাসক জানান, “সরকারি বিধি হাতে আধিকারিকেরা তদন্তে যাবেন। মিলিয়ে দেখে নেবেন, বিধি মানা হচ্ছে কিনা। টানা এই তল্লাশি চলবে।”
|