কার্বন ডাই অক্সাইডের দু’টি মাত্র সিলিন্ডার। অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা বলতে দুর্গাপুর হাসপাতালের হাতিয়ার স্রেফ এতটুকুই।
আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে ৯১ জনের মৃত্যুর পরে শেষমেশ অবশ্য নড়েচড়ে বসেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আধুনিক অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গেলে হাসপাতালে ঠিক কী কী করা প্রয়োজন তা জানতে চেয়ে দমকলের ওসিকে চিঠি পাঠিয়েছেন হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস। সে সব ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতেও সেই চিঠিতে আবেদন জানানো হয়েছে। দুর্গাপুর দমকলের ওসি নিতাই চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
অন্য দিকে, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তন্ময় মুখোপাধ্যায়-ও আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালে আধুনিক অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্বাস্থ্য ভবনে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে ঠিক হয়েছে, হাসপাতাল সুপাররা প্রকল্প বানিয়ে পাঠাবেন। স্বাস্থ্য দফতর প্রয়োজনীয় বরাদ্দ অনুমোদন করে দেবে। তন্ময়বাবু বলেন, “জেলার সমস্ত মহকুমা হাসপাতালের সুপারদের দ্রুত এই নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
|
যন্ত্র পড়ে অবহেলাতেই। নিজস্ব চিত্র। |
দুর্গাপুর হাসপাতালের ভবনটি দ্বিতল। ডিএসপি হাসপাতাল, ইএসআই হাসপাতাল, একাধিক আধুনিক বেসরকারি হাসপাতাল থাকায় আর পাঁচটি মহকুমা হাসপাতালের তুলনায় এখানে রোগীর চাপ কম। তাছাড়া ভবনের চওড়া বারান্দা, একাধিক ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা, আশপাশে কোনও বসতি না থাকা-সব মিলিয়ে আগুন লাগলেও প্রাণহানির আশঙ্কা কম। কিন্তু তাও সরকারি এই হাসপাতালে আগুন নেভানোর জন্য মাত্র দু’টি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের সিলিন্ডার থাকা মোটেও কাজের কথা নয়, এমনটাই জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, “হাসপাতালে ক্যান্টিন আছে। সেখানে আগুন জ্বলে। তাছাড়া মান্ধাতার আমলের পুরনো বৈদ্যুতিক লাইন। তা থেকে শর্ট সার্কিট হতেই পারে। যদি কোনও ক্রমে এক বার আগুন ছড়ায় তাহলে হাসপাতালের নিজস্ব যে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে তাতে মোটেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।” একমাত্র ভরসা তখন দমকল। রোগীদের সরিয়ে ফেলা সম্ভব হলেও আগুনের গ্রাস থেকে সরকারি সম্পত্তি যে বাঁচানো যাবে না তা মনে করেন অন্য চিকিৎসকেরাও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের মতোই এখানেও শুরু থেকেই আগুন নেভাতে বালি ভর্তি বালতি রাখার রেওয়াজ চলে আসছিল। আগুন লাগলে তা নেভাতে বালতি থেকে বালি নিয়ে আগুন চাপা দেওয়াই রেওয়াজ ছিল। পরের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সে সব সরিয়ে ফেলে দু’টি কার্বন ডাই অক্সাইড সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করেন। সম্প্রতি হাসপাতালের সংস্কার কাজের সময়েই বালি ভর্তি বালতিগুলিকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সংস্কার কাজের পরে যে ভাবে অবহেলায় একটি গ্যাস সিলিন্ডার জানলা থেকে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, তাতে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নিয়ে এত দিন যে কর্তৃপক্ষ মোটেও চিন্তাভাবনা করেননি সেই চিহ্ন স্পষ্ট। এমনকী আগুন লাগলে সিলিন্ডার দু’টি থেকে আদৌ গ্যাস বের করা যাবে কি না তা নিয়েও নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারেননি।
সুপার দেবব্রতবাবু জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠানো হয়েছে দমকলের ওসিকে। তাঁর কথায়, “শুধু আগুন নেভানো নয়, আগুন লাগলে কী ভাবে হাসপাতালের কর্মীরা রোগীদের উদ্ধার ও নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করতে পারেন সে ব্যাপারেও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ জরুরি।”
খাতায় কলমে না রেখে এ সব ব্যবস্থা যত দ্রুত করা যায়, রোগীদের পক্ষে ততই মঙ্গল। |