অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার কোনও বালাই নেই। সরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে গ্রন্থাগার, স্কুল, কলেজ চেহারাটা সর্বত্রই এক।
দমকলের অনুমতি ছাড়াই সবই চলেছে পরম ‘নিশিন্তে’। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির পক্ষ তেকে পাল্টা বিস্ময় প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, ‘দমকলের অনুমোদন লাগে নাকি!’
ধুলিয়ানের দমকল কেন্দ্রের অফিসার ইন চার্জ মহম্মদ আলি বলেন, “সরকারি বা বেসরকারি যে কোনও প্রতিষ্ঠান গড়তেই দমকলের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। দমকলের এনওসি পাওয়ার পরেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ছাড়পত্র পায়। কিন্তু জঙ্গিপুর মহকুমার কোথাওই তা মানা হয় না।” তিনি জানান, তারাপুরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিড়ি হাসপাতাল থেকে রাজ্য সরকারের হাসপাতাল কেউ কখনও অনুমতি নেয়নি। এমনকী, বিভিন্ন সরকারি দফতর, গ্রন্থাগার, স্কুল, কলেজও একই বাবে এনিয়ে যাওয়া হয়েছে অনুমোদনের প্রশ্ন। অথচ, স্কুলে মিড ডে মিল রান্না হচ্ছে। হাইস্কুল ও কলেজে ল্যাবরেটরি রয়েছে। যেখানে অতি-দাহ্য রাসায়নিক থাকে। তিনি বলেন, “দিন পাঁচেকের মধ্যেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার তদারকিতে যাবেন দমকলের কর্তারা। তারপরে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা হবে দমকল সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মেনে চলতে।” জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক এনাউর রহমানও মেনে নিচ্ছেন, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।
সেই ব্যাপারে সতর্কতা, সচেতনতাও খুবই কম। তিনি বলেন, “অগ্নিনির্বাপণের জন্য ব্যবস্থা নিয়ে দমকলের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নিতে বলা হবে। বিডিওদের বলা হচ্ছে নিজের নিজের এলাকায় প্রতিষ্ঠানগুলির উপরে এই বিষয়ে নজর রাখতে। বিভিন্ন জায়গায় আমরা আগুন নিয়ে সতর্কতা বাড়াতে সচেতন শিবিরও করব। কোনও ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। বিপজ্জনক ভাবেও চলতে দেওয়া হবে না।” জঙ্গিপুর মহকুমা হাসাপতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল বলেন, “আমরিতে অগ্নিকাণ্ডের পরেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে অবশ্য তেমন কোনও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।” গ্রামীণ এলাকার হাসপাতাল ও স্বাস্থকেন্দ্রগুলি যথেষ্ট খোলামেলা। বাইরে বেরোনোর একাধিক পথও রয়েছে। এটাই ‘ভরসা’ স্থানীয় তবু সতর্কতা দরকার।
সুতি ১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক অমল প্রধান বলেন, “আগুন থেকে বাঁচার বিশেষ কোনও ব্যবস্থা আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেই। আশপাশের হাসপাতালগুলিতে সে ব্যবস্থা নেই।” চিকিৎসকদের সংগঠন আইএমএ-র জঙ্গিপুর শাখার সম্পাদক প্রতাপ সাহা বলেন, “আগুনের ঝুঁকি রয়েছে সব হাসপাতালেই। যাঁরা হাসপাতালে থাকেন, তাঁরা অসুস্থ। পালানোর ক্ষমতা নেই তাঁদের। তাই আরও সতর্কতা দরকার। কারণ সব হাসপাতালেই উনুন জ্বলে। বিপদ ঘটে যেতে পারে যে কোনও সময়।”
স্কুলগুলির অবস্থা কেমন? ফরাক্কার অর্জুনপুর স্কুলে ৫৭৭৯ ছাত্র ছাত্রী। প্রধানশিক্ষক রফিকুল ওয়ারা বলেন, “দমকলের অনুমতি বা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাকোনও কিছুই নেই। এই দরনের ব্যবস্থা যে স্কুলে রাখতে হবে, তাই কেউ জানেন না। আচে বলতে ফার্স্ট এডের কিছু ওষুধপত্র।” সুতির জেলা পরিষদ সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা কমিটির সহকারী সভাপতি আশিস তিওয়ারির কথায়, “স্কুলের জন্য দমকলের অনুমতি নিতে হবে এ ধরনের কোনও নিয়মের কথা স্কুলগুলির জানাই নেই। তবে এই ব্যবস্থা থাকাটা জরুরি।” ধুলিয়ান কলেজের অধ্যক্ষ অমিত ভৌমিক বলেন, “কোনও কলেজেই আগুন নেভানোর উপযুক্ত পরিকাঠামো রয়েছে বলে জানা নেই। কিন্তু থাকাটা দরকার। তবে আমরা ঠিক করেছি, এক মাসের মধ্যেই সেই ব্যবস্থা চালু করব।” জেলায় প্রায় ৩১০০ প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। সবেতেই চালু রয়েছে মিড ডে মিল। এবিপিটিএ-র জেলা সম্পাদক তরুণ দাস বলেন, “প্রতিটি স্কুলে তিন-চারশো করে শিশু পড়াশোনা করে। তাই বিপদের ঝুঁকি তো সেখানে আরও বেশি। রান্না চলছে স্কুলের মধ্যেই। কোথাও কাঠের জ্বালানি, কোথাও গ্যাসের। কিন্তু অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই।”
জেলার গ্রন্থাগার সমিতির জেলা সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, “জেলায় ১৪৭টি গ্রন্থাগার রয়েছে। জেলা ও মহকুমার কয়েকটি গ্রন্থাগার ছাড়া কোথাও অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই। অথচ কয়েক লক্ষ টাকার বই রয়েছে সে সব গ্রন্থাগারে।”
|