সোমবার বিকেল তিনটে। হঠাৎ হাসপাতালের লবিতে শোনা গেল, ‘কোড রেড’ ঘোষণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, আগুন লেগেছে। লিফ্ট বন্ধ। আইসিসিইউ থেকে মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরানো এক যুবককে স্ট্রেচারে শুইয়ে হাসপাতালের বাইরের সিঁড়ি দিয়ে সাততলা থেকে নামিয়ে আনা হল। তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন নার্সেরা। যুদ্ধকালীন তৎরপতায় ওই যুবককে তোলা হল বাইরে হুটার বাজাতে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সে।
হাসপাতালে ফের অগ্নিকাণ্ড নয়। আগুন লাগলে কী ভাবে রোগীদের দ্রুত হাসপাতাল থেকে বার করা যায়, এ ছিল তার মহড়া। শুক্রবার ঢাকুরিয়া এএমআরআই-তে অগ্নিকাণ্ডের পরে নড়েচড়ে বসেছে সল্টলেকের অনেক বেসরকারি হাসপাতাল। আগুন লাগলে পরিস্থিতি সামলানোর মহড়া দেখা গেল তেমনই এক হাসপাতালে।
কর্তৃপক্ষের দাবি, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার এই মহড়া গত মাসে শেষ বার হয়েছিল। কিন্তু মাসে মাত্র এক বার? তাঁদের বক্তব্য, মহড়ার সময়ে হাসপাতালকর্মীরা ছাড়াও নার্স, ডাক্তারদের যুক্ত করতে হয়। এতে পরিষেবায় প্রভাব পড়ে। লিফ্ট বন্ধ থাকলে রোগীদের ওঠা-নামা বন্ধ রাখতে হয়। তাই মাসে যে দিনে রোগীর চাপ কম থাকে, সে দিন মহড়া হয়।
|
বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালে। সোমবার। ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ |
জেনারেল ম্যানেজার অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “অনেক সময়ে রোগীরা অ্যালার্ম শুনে ভয় পেয়ে যান। রোগীর আত্মীয়েরাও লিফ্ট বন্ধ থাকলে অসন্তুষ্ট হন। তবে এ বার থেকে মাসে দু’বার করে মহড়া হবে।”
দশতলা ওই হাসপাতালে এ দিন দেখা গেল, ‘কোড রেড’ জারি হতেই জনা পঞ্চাশেক কর্মী জরুরি গেটের সামনে উপস্থিত হলেন। তালিকা ধরে তাঁদের নাম মেলানো হল। প্রস্তত হয়ে গেল রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স। বেসমেন্টে চালু হল জল বেরোনোর হোস পাইপ। মোমবাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষা করা হল, স্প্রিঙ্কলারগুলি কার্যকর আছে কিনা।
মহড়ায় অবশ্য ধরা পড়ল ত্রুটিও। ঘোষণার সময়ে আওয়াজ কম থাকায় ‘সেভেন্থ ফ্লোর’-কে ‘সেকেন্ড ফ্লোর’ শুনে বিভ্রান্ত হলেন কয়েক জন। জেনারেল ম্যানেজারকে বেশ কয়েক বার উত্তেজিত কণ্ঠে ফোনে নির্দেশ দিতে হল কী ভাবে কাজ করতে হবে, তা নিয়েও। এ সব ত্রুটি কাটিয়ে উঠতেই মহড়ার সময় বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। |