বিধানসভার সংক্ষিপ্ত শীতকালীন অধিবেশনে গোটা দশেক বিল আনতে চলেছে সরকার। তার মধ্যে তিনটি অর্ডিন্যান্স এ বার বিধি মেনে বিল আকারে পেশ হবে। স্বাস্থ্য, ভূমি এবং স্টাফ সিলেকশন কমিশনের (এসএসসি) একটি করে বিল নির্ধারিত হয়ে রয়েছে। তবে সোমবার অধিবেশন শুরু হয়ে গেলেও বিলগুলির নোটিস এখনও জারি হয়নি।
প্রথামাফিক শোকপ্রস্তাবের পরে প্রথম দিনের অধিবেশন মুলতবি হয়ে গিয়েছে। শোকপ্রস্তাবে আমরি-কাণ্ডে মৃতদের কথা থাকলেও মগরাহাটে পুলিশের গুলিচালনায় নিহত দু’জনের নাম সেই তালিকায় ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে নন্দীগ্রাম বা দিনহাটায় পুলিশের গুলিতে নিহতদের কথা যে হেতু তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিধানসভার শোকপ্রস্তাবে রাখেনি, তাই অধুনা বিরোধী বাম নেতৃত্ব এ দিনের ঘটনা নিয়ে বিশেষ হইচই করেননি। তবে কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক করেও অধিবেশনের সূচি এবং বিলের তালিকা প্রাথমিক ভাবে ঠিক না-হওয়ায় তাঁরা ‘বিস্মিত’। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আজ, মঙ্গলবার আবার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক বসবে। আর বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, “সরকার অপ্রস্তুত! তাঁরা বিল আনবেন বলছেন। অথচ কবে কী বিল আসবে, ঠিক করতে পারছেন না!” এ বারের অধিবেশন চলার কথা ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সূচি চূড়ান্ত না-হলেও বিল নিয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আলোচনায় মন্ত্রী এবং বিধায়কেরা যাতে উপস্থিত থাকেন, তার জন্য তৃণমূল পরিষদীয় দলের বৈঠকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘জরুরি কাজে ব্যস্ত’ থাকায় সরকার পক্ষের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন পরিষদীয় দলের বৈঠকে থাকতে পারেননি। তাঁর পরিবর্তে বিধায়কদের পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পরে সুব্রতবাবু বলেন, “প্রতি দিন আমাদের দলের সদস্যেরা যাতে অধিবেশনে উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন, তা-ই বৈঠকে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিধানসভার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতা করার কথাও বলা হয়েছে।” স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই সুব্রতবাবু দলের বিধায়কদের জানান, তাঁরা যেন সঙ্গে দু’জনের বেশি সহকর্মী না আনেন এবং প্রয়োজনে পুলিশ বা নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁদের গাড়ি তল্লাশি করলে তা ‘আত্মসম্মানে আঘাত’ বলে মনে না-করেন। এই বৈঠকেও আমরি-র ঘটনায় মৃতদের জন্য শোকপ্রস্তাব নেওয়া হয়। পাশাপাশিই সুব্রতবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মানবিকতার সঙ্গে গোটা পরিস্থিতির মোকাবিলা যে ভাবে করেছেন, তার জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।”
কংগ্রেসের বিধায়কেরা তাঁদের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবকে অনুরোধ করেছেন, বেশ কিছু বকেয়া বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আর্জি জানিয়ে এবং তাঁর সময় চেয়ে চিঠি দিতে। জেলায় জেলায় কংগ্রেস কর্মীদের উপরে হামলা, বিভিন্ন সরকারি কমিটিতে কংগ্রেসের প্রতিনিধি না-নেওয়া, তাদের বিধায়কদের মর্যাদা না-দেওয়া এবং কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য না-পাওয়া মূলত এই বিষয়গুলি নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চায় সরকারের শরিক কংগ্রেস।
কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে তাদের উপরে শাসক তৃণমূল ও অন্যান্য দলের ‘হামলা’ নিয়ে অধিকাংশ বিধায়কই সরব হয়েছেন। সরকারে এখন কংগ্রেসের ৭ জন মন্ত্রী আছেন। বৈঠকে প্রস্তাব এসেছে, এক এক জন মন্ত্রীর নেতৃত্বে বিধায়কদের নিয়ে ৬ সদস্যের মোট ৭টি দল গড়া হোক। কোথাও দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হলে, এই দলগুলির কাজ হবে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। পক্ষান্তরে, বাম পরিষদীয় দলের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কিছু দৃষ্টি আকর্ষণী এবং মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে। তবে তা নির্ভর করবে সরকারের পদক্ষেপের উপরে।
|