দীর্ঘদিন ধরে যানজটের সমস্যায় নাজেহাল বনগাঁ ও হাবরা শহরের মানুষ। তার উপরে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ভ্যানের সংখ্যা। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বেশির ভাগ ভ্যানই বেআইনি। যার উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই পুলিশ-প্রশাসনের। নিয়মের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গজিয়ে উঠছে ভ্যানস্ট্যান্ড। এর জেরে দুর্ঘটনাও ঘটছে। সাধারণ মানুষের দাবি, প্রশাসন অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে বেশ কয়েক বার এলাকার মানুষের পক্ষ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।
শহরে ভ্যান চালানোর অনুমতি দেয় পুরসভা। বনগাঁ পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে লাইসেন্স রয়েছে এমন ভ্যানের সংখ্যা ২৫০০। কিন্তু সাধারণ মানুষের দাবি, রাস্তায় চলে কয়েক গুণ বেশি ভ্যান। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সেতুতেও একটি ভ্যানস্ট্যান্ড গজিয়ে উঠেছে। তা ছাড়াও, সেতুর ধারে সার দিয়ে ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে, সেতুর রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। তার জেরে দুর্ঘটনাও ঘটছে। |
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ভ্যান-চালকদের একাংশ ইচ্ছামতো ভাড়া চান। দুর্ব্যবহার করেন। সমস্যা বাড়ে রাতে। দিনের ব্যস্ত সময়ে যশোহর রোডে যানজট সবচেয়ে বেশি হয়। ওই রাস্তায় তিন-চারটি লাইন করে ভ্যান যাতায়াত করে। রোজগারের তাগিদে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকা থেকেও ভ্যান নিয়ে যুবকেরা শহরে ঢোকেন। এমনকী, বাংলাদেশ থেকে আসা যুবকেরাও ওই ভাবে রোজগারের রাস্তায় নেমেছেন। রাজনৈতিক দলগুলি এই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী নয়।
বনগাঁর পুরপ্রধান জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, “শহরের যানজট সমস্যা মেটাতে পুরসভায় ৫৪ জন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। বেআইনি ভ্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রশাসনকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুরপ্রধানকে বলেছি বেআইনি ভ্যানের একটি তালিকা তৈরি করতে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে, ওই কাজ যে শক্ত তা মানছেন প্রশাসনের কর্তারা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ট্রাফিক পুলিশের ডিএসপি সমরেন্দ্র দাশ বলেন, “শহরে কত ভ্যান চলবে তার অনুমতি পুরসভা দেয়। এ ব্যাপারে পুরসভাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পুলিশ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু এখনও পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়নি।”
হাবরা শহরে পুরসভা অনুমোদিত ভ্যান রয়েছে ৪১০০টি। এ ক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষের দাবি, রাস্তায় নামে এর কয়েক গুণ বেশি ভ্যান। তার মধ্যে রয়েছে মোটরভ্যানও। বনগাঁর মতো এখানেও শহরের যত্রতত্র ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। একই সমস্যায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। হাবরার পুরপ্রধান তপতী দত্ত বলেন, “শুধুমাত্র পুরসভার পক্ষে বেআইনি ভ্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। পুরকর্মীরা নিয়মিত ভাবেই বেআইনি ভ্যান আটক করেন। ভ্যানচালকদের আর্থিক জরিমানাও করা হয়। কিন্তু পুলিশের সাহায্য ছাড়া এই অভিযান পুরোদমে চালানো সম্ভব নয়। হাবরা থানার নতুন আইসি-কে শীঘ্রই এ ব্যাপারে বলা হবে।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সঙ্গে বেশি ভ্যান আটক করলে সমস্যা দেখা দেয়। কেননা, বেশি ভ্যান রাখার জায়গা নেই। |