শহরের প্রাণকেন্দ্র পোড়া মা তলা। তার চৌমাথার মোড়ে বসানো হয়েছে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার। আর সেই ট্রান্সফর্মারের ঠিক নীচেই উনুন জ্বেলে চলছে চায়ের দোকান। নবদ্বীপের সব থেকে ঘিঞ্জি এই এলাকা জুড়ে দোকান, হোটেল, বসবাসের বাড়ি সবই একে অপরের গা লাগোয়া। পোড়া মা মন্দির চত্বর লাগোয়া দোকানের প্রায় সবই অস্থায়ী। এ ছাড়াও রয়েছে চার দিকে শ’য়ে শ’য়ে দোকান এবং বসতবাড়ি। আমরি কাণ্ডের পরেও সবই একই রকমই রয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে গায়ে গায়ে লাগানো গোস্বামী বাজার, রাজা বাজার, তহবাজার। নবদ্বীপের বহু মানুষের অর্ধেকের বেশি মানুষের রুটি-রুজির উৎস ওই বাজার চত্বর। কার্যত অগ্নিনির্বাপণের ন্যূনতম ব্যবস্থা ছাড়াই কিন্তু চলছে ওই বাজার। আর সরু গলির দু’পাশে কয়েক হাজার ছোট বড় দোকান, গুদাম চত্বর। দাহ্য শাড়ি কাপড় পলিথিন দিয়ে ঠাসা। আর বাজার জুড়ে যেখানে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে অবাধে চলছে চা পরোটা কচুরির রমরমা কেনাবেচা। আটের দশকে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল গোস্বামী বাজার। তাঁত কাপড় হাটের বিরাট চারতলা ভবনে রয়েছে অসংখ্য দোকান ও গুদামঘর। হাটবারে বহু মানুষ আসেন। কম বেশি ৪০-৫০ লক্ষ টাকার কেনাবেচা হয়। কিন্তু তাঁতবস্ত্রের সেই বিশাল সম্ভারের মধ্যেই আগুন নিয়ে ভাবনাচিন্তা কম। আশেপাশের দোকানে রয়েছে উনুন। ভরসা একটিমাত্র ছোট জলাধার। নবদ্বীপ তাঁত কাপড় হাটের পরিচালন সমিতির সম্পাদক গোপেশ্বর ভৌমিক বলেন, “জলাধার, দু’টো সিঁড়ি, একাধিক প্রবেশদ্বার সবই রয়েছে। কিন্তু বিপদ অন্য জায়গায়। দোকানে বিড়ি সিগারেট খাওয়া কমানো যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের বলেছি, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিতে। কেউই নেননি।” দমকলের নবদ্বীপ কেন্দ্রের ওসি শক্তিপদ দে বলেন, “নবদ্বীপে বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলির একটিরও আগুন নেভানোর ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকু নেই। কারও দমকলের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া নেই। দমকল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা স্বীকার করেন, “আমাদের অগ্নিনির্বাপণের তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। তবে রাজাবাজার নিয়ে আমাদের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। তহবাজারে একটি নতুন ত্রিতল ভবন তৈরি হবে। তখন সেখানে জলাধারের বন্দোবস্ত থাকবে।” পাশাপাশি, তাঁর কথায়, “এই বিরাট জায়গা জুড়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক থাকতে হবে।” পোড়া মা তলা এলাকার ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সম্পাদক বলাই গোস্বামী বলেন, ‘‘আমরা বিদ্যুৎ ব্যবস্থার নজরদারির জন্য একজন সর্বক্ষণের কর্মী রেখেছি। তবে এখানে স্থায়ী ভাবে দরজা করতে দেওয়া হয় না। প্রচুর পলিথিন, কাঠ রয়েছে।” |