মোবাইল নিয়ে বিবাদের জেরে খুড়তুতো ভাইকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ উঠল এক কিশোরের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই কিশোর সাহাবাজ আলি ওরফে বাপিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে তার বাবা বাসিরুদ্দিন শেখকেও। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানার হাউসনগরে। মৃত কিশোরের নাম বাজারুল শেখ (১৩)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজারুল আর সাহাবাজের মধ্যে ভাব ছিল গলায় গলায়। হাউসনগর গ্রামের মধ্যে উত্তরপাড়ার বাসিন্দা দু’টি পরিবারই মোটামুটি স্বচ্ছল। স্থানীয় সাহেবনগর হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। সাহাবাজ পড়ত গ্রামেরই হাউসনগর হাইমাদ্রাসার নবম শ্রেণিতে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বাজারুলের খোঁজ মিলছিল না। শনিবার তার বাবা সামশেরগঞ্জ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তারপরে সোমবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে গ্রামেরই এক সরকারি কৃষি খামারের মাঠের মধ্যে বাজারুলের দেহ পাওয়া যায়। তাকে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ সাহাবাজের বাবা বাসিরুদ্দিন শেখকেও গ্রেফতার করেছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার বলেন, “পুলিশের জেরায় ধৃত সাহাবাজ খুড়তুতো ভাই বাজারুলকে শ্বাসরোধ করে খুনের কথা কবুল করেছে। সে একাই সে কাজ করেছে বলে জানিয়েছে। তবে তার সঙ্গে আর কেউ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তিনি বলেন, “বাজারুল তার মোবাইলটা সাহাবাজকে সারাতে দিয়েছিল। |
তাই নিয়েই শুক্রবার সন্ধ্যায় দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। সাহাবাজ জানিয়েছে, তখনই গলা টিপে শ্বাসরোধ করে বাজারুলকে খুন করেছে। পরে কৃষি ফার্মের নির্জন এলাকায় তার দেহটি নিয়ে গিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলার চেষ্টা করে। সাহাবাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” বাজারুলের মা রুমেলা বিবি বলেন, “আমার ছেলে একটা মোবাইল সারাতে দিয়েছিল খুড়তুতো দাদা সাহাবাজকে। কিন্তু ফোনটি বারবার চেয়েও ফেরত পাচ্ছিল না। শুক্রবার তাই নিয়েই বিবাদ শুরু হয়। ফুলপ্যান্ট ও মোটা গেঞ্জি পরে সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল বাজারুল।” তিনি বলেন, “ওদের দু’জনকে এক সঙ্গে কৃষি ফার্মের রাস্তার দিকে যেতে দেখেছেন অনেকেই। ওরা একে অপরের খুব ভাল বন্ধু ছিল।” বাজারুলের বাবা এজাবুল শেখ বলেন, “সাহাবাজকেই বার বার জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ছেলেটা কোথায়। ও বার বারই বলেছিল বাজারুল সাইকেলে করে গ্রামের দিকে চলে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত রবিবার ফের সাহাবাজকে ধরে জিজ্ঞাসা করলে ও বলে বাজারুলকে চার জন অচেনা লোক তুলে নিয়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু তখন তার অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে সন্দেহ হতে থাকে। সোমবার সকালে জানতে পারি, ছেলের দেহ পড়ে রয়েছে কৃষি ফার্মের মাঠে।” তার পরেই খবর দেওয়া হয় সামশেরগঞ্জ থানায়। পুলিশ এই দিন দফায় দফায় জেরা করে কিশোর সাহাবাজকে। ময়নাতদন্তের পরে জানা গিয়েছে বাজারুলের মুখ নাকের উপরে কিছু চাপা দিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে। তা থেকেই পুলিশের সন্দেহ, পরিকল্পিত ভাবে এই খুনের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। |