গঙ্গা-পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি গড়িয়ে নদীতে পড়ে তলিয়ে গিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার এক পরিবারের তিন সদস্য। সোমবার সেই টাটা সুমো গাড়িটির চালক সঞ্জীব মার্জিত মুর্শিদাবাদ থানায় আত্মসমর্পন করলেন।
পুলিশের সঙ্গে এ দিন গঙ্গার ঘাটে গিয়ে তিনি দেখিয়েও দিয়েছেন, কী করে গাড়িটি গড়িয়ে পড়ল জলে। কী করেই বা ছুটে গিয়ে শেষ রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন ওই পরিবারের কর্তা জয়দেব মজুমদার। চালকের মতে, জয়দেববাবুর ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র দেবরাজের ভুলেই সে দিন ওই দুর্ঘটনা ঘটে ছিল। তবে পুলিশ ওই চালকের বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারায়, অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করেছে। সেই সঙ্গে পরিবহণ বিধি অমান্য করার দায়ে ২৬৯ ধারাতেও মামলা রুজু করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। সঞ্জীবকে এ দিন আদালতে হাজির করানো হলে বহরমপুর মহকুমা আদালতের বিচারক ওই চালককে ৩ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। শনিবার দুপুরে ওই দুর্ঘটনার পরে সঞ্জীবের আর খোঁজ মেলেনি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশেরও মনে হয়েছিল, গড়িয়ে পড়া গাড়ির নিচে চাপা পড়ে তিনিও তলিয়ে গিয়েছেন নদীতে। কিন্তু পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রবিবার গভীর রাতে বহরমপুর থানায় আত্মসমর্পন করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন ওই চালক। |
খানিক পরে তিনি নিজেই চলে আসেন থানায়। সোমবার সকালে তাঁকে বহরমপুর থেকে মুর্শিদাবাদ (লালবাগ) থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে থানা চত্বরে পুলিশের গাড়ি ঘিরে মৃত জয়দেববাবুর পরিজনেরা বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভকারীদের দাবি, চালকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করতে হবে।
সঞ্জীবের বাড়ি মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের ভালকুন্দি গ্রামে। তিনি অবশ্য উত্তর কলাকাতার উমেশচন্দ্র লেনে জয়দেববাবুদের পাশের পাড়ায় দয়াল মিত্র লেনে ভাড়া থাকতেন। সেখানে থেকে তিনি কলকাতায় তাঁর নিজের গাড়ি ভাড়া খাটান। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার বলেন, “ওই দিন দুপুর দুটো নাগাদ হাজারদুয়ারি দেখে জয়দেববাবুদের ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। চালক পিছনে দাঁড়িয়ে গাড়ি মুছছিলেন। কয়েক হাত দূরের নদীপাড় থেকে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছিলেন জয়দেববাবু। |
তাঁর সঙ্গে ছিল মেয়ে শ্রেয়া। গাড়িতে ছিলেন জয়দেববাবুর স্ত্রী রূপাদেবী ও ছেলে দেবরাজ। গাড়িতে ওঠার সময় গান শোনার জন্য দেবরাজ চালকের কাছে গাড়ির চাবিটি চেয়ে নেয়। কিন্তু চাবি ঘোরাতেই চালু হয়ে গিয়েছিল গাড়িটি। তারপরে গিয়ারে থাকা সেই গাড়ি গড়িয়ে যেতে থাকে নদীর দিকে। সেই সময়ে ওই চালকও গাড়িটি আটকানোর চেষ্টা করে। জলে পড়েও যায়। কিন্তু তারপরে তার ঘাড়েই দোষ পড়বে অনুমান করে গা ঢাকা দিয়েছিল ওই যুবক।” কলকাতার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের ৮ জনের ডুবুরির দল এ দিনও সকাল থেকে নদী গর্ভে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় তল্লাশি চালায়। তবে রূপাদেবী ও দেবরাজের হদিশ করতে পারেনি। মৃত জয়দেববাবুর দাদা শিবশঙ্করবাবু বলেন, “শ্রেয়াকে রবিবার রাতে কলকাতার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জয়দেবের দেহ রয়েছে বহরমপুরে মর্গে। রূপা ও দেবরাজকে পাওয়া গেলে, ওঁদের তিন জনকে নিয়েই কলকাতা ফিরব।” |