খুনি আর কেউ নন, তাঁর স্বামী। শুধু এই দাবি করাই নয়, খুন করে দেহটি কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে তা-ও ত্যাড়াবাঁকা হাতের লেখায় লিখে দিয়েছিলেন মহিলা। তার পরে জানলা গলিয়ে দোমড়ানো কাগজ ফেলে দিয়েছিলেন রাস্তায়। পথচলতি এক যুবক সে চিঠি কুড়িয়ে পেয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানকে দেন। তারই সূত্র ধরে সোমবার পুলিশ কৃষ্ণনগরের তারকদাসপুর থেকে উদ্ধার করেছে মধ্য তিরিশের এক যুবকের পচন ধরা দেহ। তবে বিশাখা দাস নামে ওই মহিলার স্বামী খোকনের খোঁজ মেলেনি। পুলিশের ধারণা, স্ত্রী যে এ রকম কিছু ঘটাতে পারেন, সম্ভবত তা আঁচ করেই দিন দু’য়েক আগে মাকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালান তিনি।
সোমবার ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরে উত্তেজিত গ্রামবাসী খোকনের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় তাঁর চায়ের দোকানেও। খোকনদের বাড়িতেই থাকতেন তাঁর মাসি সনকাদেবী। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। থানায় জেরা করা হচ্ছে বিশাখাকেও। নদিয়ার দইয়েরবাজার মাঠপাড়া গ্রামের হারাধন মণ্ডলের (৩৪) সঙ্গে খোকনের যে কোনও বিরোধ ছিল, পাড়া-পড়শিরা অন্তত তা আগে আঁচ করতে পারেননি। |
তবে ইটভাটার মজুর হারাধন দিনান্তে গ্রামে ফেরার পথে প্রায় রোজই খোকনদের চায়ের দোকানে আড্ডা মারতে আসতেন। ক্রমে, খোকনের মদ-গাঁজার সঙ্গীও হয়ে উঠেছিলেন তিনি। চায়ের দোকান থেকে দু’পা দূরত্বে
খোকনদের বাড়িতে যাতায়াতও যে নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তা গ্রামবাসীর চোখে এড়ায়নি।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, তাঁদের বাড়িতে হারাধনের এই আসা-যাওয়াটা ‘ভাল চোখে’ দেখেননি খোকন। তাই তাঁকে খুন করে বাড়ির পিছনে খাটা-পায়খানার কুয়োয় ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর মা ও মাসি সে ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। আর, জানলার ফাঁক দিয়ে দেখে ফেলেছিলেন আরও এক জন, স্ত্রী বিশাখা।
নদিয়া জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমন মিশ্রের মতে, “খোকন অবশ্য জানতেন না যে, তাঁর স্ত্রী ঘটনাটি দেখে ফেলেছেন। বিষয়টি আড়াল করতে গত কয়েক দিন ধরে তাঁকে ওই শৌচাগার ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছিল না বলে জেরায় বিশাখা আমাদের জানিয়েছেন।” পুলিশকে বিশাখা আরও জানান, হারাধনকে খুনের বিষয়টি মানতে পারেননি বলে অপরাধবোধে ভুগছিলেন তিনি। সে কারণেই রবিবার রাতে গোপনে চিঠি লিখে বাড়ির সামনে ফেলে দিয়েছিলেন। প্রায়ই মদ্যপান করে খোকন তাঁর উপরে ‘অত্যাচার’ চালাতেন বলেও পুলিশের কাছে দাবি করেছেন মধ্য কুড়ির ওই গৃহবধূ।
হারাধনের দিদি স্বপ্না বিশ্বাসের বাড়ি ওই গ্রামেই। তিনি বলেন, “ভাই দিন কয়েক ধরে নিখোঁজ ছিল। আমরা ভাবতেই পারিনি খোকন এমন কাজ করতে পারে।” হারাধনের স্ত্রী অসুস্থ। কিছু দিন ধরেই তিনি বাপের বাড়িতে। মা রেণুকাদেবী বলেন, “ছেলে বাড়ি না ফেরায় কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল। খোকনদের বাড়িতেও গিয়েছিলাম খোঁজ করতে। কিন্তু ওরা বলে, হারাধনের কোনও খবর জানে না। ভাবতে পারিনি যে, ওরাই ছেলেকে মেরে ফেলেছে।” |