চেন্নাই ম্যাচের আগের রাতে তাঁর সেলফোনের ইনবক্সে বার্তার সংখ্যা ছিল দশ। চব্বিশ ঘণ্টা পরেই সোমবার সন্ধেয় ইনবক্সে বার্তার সংখ্যা ৪০০-র বেশি! মিনিটে মিনিটে আরও বেড়ে চলেছে। রবিবার রাতে দু’ঘণ্টার বেশি ঘুম হয়নি, হাওড়ার ফোরশোর রোডের ফ্লাওয়ার ভ্যালি অ্যাপার্টমেন্টে দোতলার ফ্ল্যাটে পৌঁছনোর পর থেকেই উৎসব। কচিকাঁচাদের দাবিতে নামতে হল ক্যাম্বিস বলে গলি ক্রিকেটেও। এ সবের ফাঁকে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন মনোজ তিওয়ারি।
প্রশ্ন: আমরির অগ্নিকান্ডে মৃতদের জন্য সেঞ্চুরিটা উৎসর্গ করবেন, আগে থেকে ঠিক করা ছিল?
মনোজ: সেঞ্চুরি করার পরে মনে হয়েছিল যদি ম্যান অব দ্য ম্যাচটা পাই, তা হলে সেঞ্চুরিটা উৎসর্গ করব। সে দিন টিভি দেখতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম। যেখানে মানুষ সেরে উঠতে যায়, সেখানে কেন এমন হবে? ভাগ্য ভাল, ম্যান অব দ্য ম্যাচটা পেয়েছিলাম। তাই যাঁরা চলে গেলেন, তাঁদের স্মৃতিতে সেঞ্চুরিটা উৎসর্গ করতে পেরেছি।
প্র: ৭০-এ পৌঁছনোর পর থেকেই নাকি পেশিতে টান ধরেছিল আপনার?
মনোজ: হ্যাঁ, একটা সময় মনে হচ্ছিল আর পারছি না। তখন বড়জোর ৭০-৭৫ হবে। এক বার ভাবলাম, রিটায়ার্ড হার্ট হই। পরে ক্র্যাম্প সারলে নামা যাবে। তখনই কেন জানি না, মনে হল এমন সুযোগ আর আসবে না। স্রেফ মনের জোরে তার পর ব্যাট করে গিয়েছি। মনে পড়েছে গত ক’দিন ধরে দেখা ভিডিওগুলোর কথা। |
প্র: ভিডিও?
মনোজ: হ্যা। ইউ টিউবে নিয়মিত মোটিভেশনাল ভিডিও দেখি আমি। চেন্নাই ম্যাচের আগের দিন দেখেছিলাম ’৯২-এর বার্সেলোনা অলিম্পিকে ব্রিটিশ অ্যাথলিট ডেরেক রেডমন্ডের ৪০০ মিটার দৌড়। ১৫০ মিটারের পরে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান ধরে ট্র্যাকে শুয়েই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। চিকিৎসকরা অবসর নিতে বললেও শোনেননি। কাঁদতে কাঁদতে এক সময় উঠে দাঁড়ান। তাঁর বাবা ট্র্যাকে এসে বলেন, “ওঠো, তোমার সঙ্গে আমি দৌড়ব।” বাবার সঙ্গে আরও কিছুটা দৌড়ন রেডমন্ড, তার পর শেষ ৫০ মিটার একা। দৌড় শেষ করার পরে স্টেডিয়ামের ৭০ হাজার দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে এই অতিমানবিক চেষ্টাকে সম্মান জানিয়েছিল। শিক্ষাটা হচ্ছে, ‘ডোন্ট গিভ আপ।’ যত কষ্ট বাড়ছিল, ক্রিজে দাঁড়িয়ে রেডমন্ডের মরণপণ দৌড়টা বারবার মনে পড়ছিল, আমাকে টানছিল। সারা গায়ে অসহ্য যন্ত্রণা, একটা সময় আম্পায়ারকেও বলেছিলাম, হাতে মাসাজ করে দিতে। নিজেকে বলছিলাম, ছেড়ো না, এমন সুযোগ আর জীবনে না-ও আসতে পারে।
প্র: শেষ ম্যাচে সুযোগ আসবে জানতেন?
মনোজ: বীরু ভাই বলেই সুযোগটা এসেছে। আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ। আমাকে টিম বাসেই বলেছিল, আজ তুই কোথায় খেলতে চাস বল? যেখানে খেলতে চাইবি নামাব। আমি বরাবর চার নম্বরে ব্যাট করে রান পেয়েছি। তাই বলেছিলাম, চারে নামলে ভাল হয়। বীরু ভাই বলেছিল, তাই হবে।
প্র: ম্যাচ শেষে বাংলার টিমমেটদের কারা কারা ফোন, এসএমএস করলেন?
মনোজ: দাদি। আমাকে এসএমএস করেছিল। বরাবরের ফাইটার। ওর বহু ইনিংসও মোটিভেট করে।
প্র: কালই তো আবার বাংলার অবনমন বাঁচাতে নেমে পড়তে হচ্ছে?
মনোজ: হুঁ, কঠিন লড়াই আমাদের সামনে। শুনলাম সবুজ উইকেট হয়েছে। দিল্লি টিমটা বেশ ভাল। কাল থেকে সামনের দুটো বেঙ্গল ম্যাচ ছাড়া কিচ্ছু ভাবব না। রেলিগেশনটা হতে দেওয়া যাবে না।
প্র: ধরেই নেওয়া হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় যাবেন...
মনোজ: আমার ডেবিউ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। এ বার গেলে চার-পাঁচ বার যাওয়া হয়ে যাবে। গত বছর ইমার্জিং টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি রান করেছিলাম। সেটা কাজে লাগবে। টেনিস বলে প্র্যাক্টিসটাও করতে হবে। |