সম্পাদকীয় ২...
সংস্কারের দাবি
কারচুপি করিয়া নির্বাচনে জয়লাভের প্রতিবাদে রাশিয়ার জনসাধারণ দেশের শাসক দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি ও তাহার নিয়ামক ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামিয়া বিক্ষোভ দেখাইয়াছেন। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পতনের পর এত বড় গণবিক্ষোভ রাশিয়ায় সংগঠিত হয় নাই। সংখ্যানুপাতে এই দুই বিক্ষোভের তুলনা চলে না। কিন্তু ডিসেম্বরের মস্কোয় ৫০ হাজার মানুষের জমায়েতও বড় কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়। বিশেষত তাঁহারা সকলেই যখন নির্বাচনী কারচুপির প্রতিবাদ করিতে গিয়া ‘পুতিন-বিযুক্ত রাশিয়া’র দাবিতেও মুখর। বস্তুত, দুই-দুইটি মেয়াদ প্রেসিডেন্ট পদে কাটাইয়া চার বছর প্রধানমন্ত্রী থাকিবার পর পুনরায় প্রেসিডেন্টের পদে ফিরিয়া আসার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার পরই পুতিনের প্রতি বীতরাগে রুশ জনসাধারণ প্রতিবাদী। ইহাতে নির্বাচনী ফলাফলে কোনও হেরফের হইবে না। কিন্তু পুতিন ও তাঁহার দলের অবিসংবাদী আধিপত্য ও অপরাজেয়তার উপকথাটি বিনষ্ট করার পক্ষে ইহা যথেষ্ট।
ভ্লাদিমির পুতিন প্রাক্তন কেজিবি প্রধান হইলেও পুরোপুরি সোভিয়েত ধাঁচের স্বৈরাচারী নহেন। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের নবাবিষ্কৃত সম্ভারের রফতানি মারফত রুশ অর্থনীতিকে তিনি অনেকটাই উজ্জীবিত করেন। ইউরোপের ক্রয়ক্ষমতা অর্জনের যে বাসনা রুশদের তাড়িত করিত, তাহাও তিনি অনেকটা মিটাইয়া দেন। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করায় পুতিন তাঁহার সোভিয়েত পূর্বসূরিদেরই অনুগামী। আর্থিক সম্পদও অনেকাংশেই পার্টি আমলাতন্ত্র ও হঠাৎ-নবাব শিল্পপতিদের মাফিয়া-চক্রের কুক্ষিগত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আদর্শ নয়, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করিয়া বিত্তবান ও প্রভাবশালীদের স্বার্থে তাহা ব্যবহৃত হয়। যত দিন পুতিনের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় কোনও আঁচড় পড়ে নাই, তত দিন পরিস্থিতি এক রকম ছিল। কিন্তু ক্রমাগত একই রাজনীতিককে শীর্ষ ক্ষমতায় দেখিবার একঘেয়েমি ও ক্লান্তি রুশ মধ্য শ্রেণিকে তাঁহার প্রতি বিরূপ করিয়াছে। তাঁহার লৌহকঠিন নিয়ন্ত্রণ ও তাহার সমর্থনে সরকারি গণমাধ্যমে নিরন্তর স্তুতি-স্তাবকতাও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করিয়া থাকিবে। উপরন্তু কারচুপি করিয়া ভোটে জেতার বিষয়টিও তাঁহাদের ক্ষুব্ধ করিয়াছে।
প্রতিবাদী জনসাধারণের বিক্ষোভকে প্রথম দিকে পুলিশি দমননীতি দিয়াই মোকাবিলা করার চেষ্টা হয়। কিন্তু তাহাতে হিতে বিপরীত হওয়ার শঙ্কায় শেষ পর্যন্ত সরকার বিক্ষোভকারীদের নির্দিষ্ট দিনে ও সময়ে মস্কোয় জমায়েত হওয়ার অনুমতি দেয়, যদিও সে জন্য জমায়েতকারীদের প্রত্যেককে নিজ-নিজ নাম নথিভুক্ত করাইতে হয়। রাষ্ট্র যেখানে এ ভাবে স্বতঃস্ফূর্ত গণ-আন্দোলনকেও নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে গণতন্ত্রের অবাধ হওয়ার সম্ভাবনা দূরপরাহত। তাই শাসনব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি রাশিয়ায় বাড়িতেই থাকিবে। বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই সোভিয়েত জমানার ভুক্তভোগী, তাই সিঁদুরে মেঘের সঙ্কেত তাঁহারা পড়িতে পারেন। তুলনায় পুতিনের সমর্থক বাহিনীর মধ্যে সোভিয়েত জমানার কোনও স্মৃতি নাই। কিন্তু তিনি নিজে ব্রেজনেভ জমানার স্মৃতিমেদুরতায় এখনও কাতর, তাঁহার পরিণতবয়স্ক সমর্থকরা তাই সেই জমানার গুণকীর্তন করেন। পার্টি আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে রাশিয়ার সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির উপর সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ কায়েমের সোভিয়েত অপপ্রয়াসই ক্রমশ পুতিনের চিত্রনাট্যে স্পষ্ট হইতেছে। রাশিয়ায় সঙ্কটের সম্ভাবনা অতএব থাকিয়াই যাইতেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.