ঘরোয়া রাজনৈতিক বিতর্কের জেরে বহু ‘ব্র্যান্ডের’ খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা যখন বিশ বাঁও জলে, সেই সময় মার্কিন প্রশাসন কূটনৈতিক স্তরে ভারতকে এ ব্যাপারে চাপ দিতে শুরু করল। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়নের প্রশ্নে মার্কিন পরমাণু সংস্থাগুলোর আশঙ্কার কথাও সাউথ ব্লকের সামনে তুলে ধরা হল হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে। আজ এই লক্ষ্যে রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করলেন মার্কিন বিদেশ দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি উইলিয়াম বার্নস।
আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপিত হলেও সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনায় কিছুটা তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছে। এ দেশের বহু ‘ব্র্যান্ডের’ খুচরো ব্যবসায় লগ্নি করার জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছে বেশ কিছু মার্কিন সংস্থা।
|
ভারতে বার্নস। |
ওবামা সরকারের উপর এ ব্যাপারে যথেষ্ট চাপও রয়েছে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংস্থাগুলির তরফ থেকে। গত বছর বারাক ওবামা ভারত সফরে এসে এখানকার বাজার খুলে দেওয়ার জন্য মনমোহন সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন। সম্প্রতি মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনও এ ব্যাপারে সরব হয়েছেন। ফের আর একটি আর্থিক মন্দার সম্ভাবনা বাড়ছে। এই অবস্থায় ওবামা সরকারের কাছে ভারতের বাজারে আরও বেশি করে প্রবেশ করারও তাগিদও বাড়ছে।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আজ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বার্নসকে জানিয়েছেন, বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে সরকার আগ্রহী এবং ভবিষ্যতে তা রূপায়ণ করার কথা ভাবা হবে। কিন্তু সব শরিক এ ক্ষেত্রে, এই মুহূর্তে কংগ্রেসের পাশে নেই। পারষ্পরিক সহমত ছাড়া এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব নয় সরকারের পক্ষে। তাই আজ বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তাৎপর্যপূর্ণভাবে বার্নস বলেন, “ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে সম্পর্কে হঠাৎ করে নাটকীয় কিছু ঘটবে না। প্রত্যেক দিন পরিশ্রম করে তা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, আমেরিকার হতাশা তৈরি হয়েছে ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তির রূপায়ণ নিয়েও। বালিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া সম্মেলন থেকে ফেরার সময় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পরমাণু দায়বদ্ধতা আইনের প্রশ্নে অনড় থাকবে ভারত। ভারতের এই অবস্থানে মার্কিন পরমাণু সংস্থাগুলির মাথায় হাত পড়েছে। ওয়াশিংটনের পক্ষে সমস্যার কারণ হল, এ ক্ষেত্রেও ঘরোয়া রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে মনমোহন সরকারকে অনড় থাকতে হচ্ছে। তার মধ্যে কতটা সুবিধা মার্কিন বিনিয়োগকারীদের দেওয়া যায়, তা নিয়ে চিন্তা করা হবে বলে ভারতীয় নেতৃত্ব আজ বার্নসকে জানিয়েছেন। |