মূল্যবৃদ্ধি থেকে দুর্নীতি লাগাতার বিরোধী আক্রমণের মোকাবিলায় এ বার পাল্টা কৌশল নিচ্ছে সরকার। আগামিকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এক সঙ্গে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিলে অনুমোদন দিতে চলেছে। এগুলি হল, খাদ্য সুরক্ষা বিল, বিচারকদের দায়বদ্ধতা বিল, হুইসল ব্লোয়ার (সরকারি বা বেসরকারি ক্ষেত্রের দুর্নীতি ফাঁস করে দেন যাঁরা) নিরাপত্তা বিল এবং নাগরিক সনদ ও অভিযোগ প্রতিকার বিল। এ ছাড়া টাকার অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধ সংশোধন বিলেও কাল অনুমোদন দিতে পারে মন্ত্রিসভা। পাঁচটি বিলই সংসদের চলতি অধিবেশনে পেশ করতে চাইছে সরকার।
‘আম-আদমির’ নিত্যদিনের জীবনযাত্রার নিরিখে এর মধ্যে দু’টি বিষয় নিঃসন্দেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রথমটি হল, খাদ্য সুরক্ষা বিল। যে বিল সংসদে পাশ হলে গ্রামীণ এলাকার ৭৫ শতাংশ ও শহরের ৫০ শতাংশ মানুষ কম দামে মাথাপিছু ৭ কেজি খাদ্যশস্য পাবেন। ৩ টাকা কেজি দরে চাল, ২ টাকা কেজি দরে গম এবং ১ টাকা কেজি দরে দানাশস্য মিলবে এই যোজনায়। দ্বিতীয়টি হল, নাগরিক সনদ এবং অভিযোগ প্রতিকার বিল। আমলাতন্ত্রের নিচুস্তরের দুর্নীতির জন্য সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, এই নতুন বিধি তার থেকে প্রতিকার দেবে বলে সরকারের দাবি।
সার্বিক ভাবে এই পাঁচটি বিলের কোনওটিই কিন্তু নতুন। কিন্তু এগুলিতে অনুমোদন দেওয়ার সময়টি রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দুর্নীতির বিষয় নিয়ে তামাম বিরোধী শিবির এবং অণ্ণা হজারে ও তাঁর সহযোগীদের ধারাবাহিক সমালোচনার জেরে ইতিমধ্যেই সরকার তথা কংগ্রেসের ভাবমূর্তিতে আঁচ পড়েছে। অনেকেই মনে করছেন, দুর্নীতি দমনের জন্য এক সঙ্গে চারটি বিলে অনুমোদন দিয়ে সেই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারেই সচেষ্ট সরকার। কেন্দ্রের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “দুর্নীতি দমনের জন্য অণ্ণা কেবল লোকপাল বিল পাশের কথা বলছেন। কিন্তু মনমোহন সিংহ-সনিয়া গাঁধীর বক্তব্য, লোকপাল সর্বরোগহর নয়। এ জন্য বহুমুখী ব্যবস্থার প্রয়োজন। সে কারণেই এ বার যেমন লোকপাল বিল সংসদে পেশ হবে, তেমনই পেশ হবে দুর্নীতি মোকাবিলায় আরও চারটি বিল।
গোড়া থেকেই টিম-অণ্ণার দাবি ছিল, বিচারব্যবস্থা এবং নাগরিক সনদকে লোকপালের আওতায় আনা হোক। কিন্তু সরকার তা নিয়ে পাল্টা যুক্তি দেয় ও আপত্তি জানায়। কেন্দ্রের অবস্থান হল, দশ রকম দায়িত্ব লোকপালের কাঁধে চাপিয়ে অহেতুক ভারাক্রান্ত করা অযৌক্তিক। নাগরিক সনদ ও বিচারকদের দায়বদ্ধতার জন্য পৃথক বিল হবে। বিচারকদের দায়বদ্ধতা বিলটি ইতিমধ্যেই সংসদে এক বার পেশ হয়েছে। স্থায়ী কমিটির বিবেচনার পরে সংশোধন করে সেটি কাল নতুন করে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পেশ হবে। বিচারকদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নতুন নিয়ম থেকে শুরু করে বিচারক কমিশন গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে নতুন বিলে।
দুর্নীতি দমনে সরকারের সদিচ্ছার বার্তা দেওয়া একটা দিক। সেই সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি নিয়েও সরকারের মাথাব্যথা কম নেই। সরকারের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করাতে পারলে সরকার এক সঙ্গে অনেক বার্তা দিতে পারবে। মূল্যবৃদ্ধির আঁচ থেকে দরিদ্র মানুষ যাতে কিছুটা সুরাহা পায়, তা সুনিশ্চিত করা হবে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির মতো সংস্কারের বিষয়ে পদক্ষেপ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত থাকবে। কংগ্রেস তখন অন্তত এটুকু বলতে পারবে যে, আম-আদমির স্বার্থ সুরক্ষিত রেখেই আর্থিক সংস্কার চায় সরকার। তা ছাড়া প্রথম ইউপিএ জমানায় যেমন একশো দিনের রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প রূপায়ণকে কংগ্রেস পুঁজি করেছিল, তেমনই দ্বিতীয় ইনিংসে খাদ্য সুরক্ষা আইন পাশ তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে বলে আশাবাদী দলের নেতারা। যদিও তাঁরা এটাও মানছেন যে, শুধু পাশ করানোই নয়, ওই আইনের রূপায়ণ কী ভাবে ও কতটা হবে এবং দল মানুষকে বিষয়টি কতটা বোঝাতে পারবে, তার ওপরই নির্ভর করবে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সাফল্য। |