|
|
|
|
মমতার সিদ্ধান্তে কটাক্ষ গৌতমের |
নিউটাউনে বিচারবিভাগীয় তদন্ত |
রঞ্জন সেনগুপ্ত |
নিউটাউনের জমি কেনাবেচায় অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে, তার বিচারবিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রণজিৎ মিত্রকে। মহাকরণ সূত্রের খবর, দু’এক দিনের মধ্যেই এই সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাবে।
নিউটাউনের জমি কেনাবেচা নিয়ে কমিশন মূলত ৭-৮টি বিষয় দেখবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না; জমিদাতারা যথাযথ দাম পেয়েছেন কি না; জমি বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনও বেনিয়ম হয়েছে কি না; একই জায়গায় একই চরিত্রের একাধিক জমি কেনার সময় দামের ক্ষেত্রে হেরফের করা হয়েছে কি না; লটারির মাধ্যমে জমি ও ফ্ল্যাট বিলির ক্ষেত্রে কাউকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে কি না; এমন হয়ে থাকলে সেই ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা ইত্যাদি বিষয়ই কমিশনের বিচার্য।
সরকারি নিয়ম মেনে কমিশনকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হচ্ছে।
মূলত যাঁর আমলে জমি কেনাবেচা নিয়ে নতুন সরকারের অভিযোগ, সেই বাম সরকারের আবাসনমন্ত্রী ও হিডকোর প্রাক্তন চেয়্যারম্যান গৌতম দেব মমতার সিদ্ধান্তের কথা শুনে বলেন, “তদন্ত করে আমার পিছনে লাগতে চাইলে তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু উনি (মুখ্যমন্ত্রী) নিউটাউনটা করুন।” তাঁর দাবি, “নিউটাউনের জন্মলগ্ন থেকে জমি অধিগ্রহণ ও বণ্টন নিয়ে হাইকোর্টে যত মামলা হয়েছে, তার সব ক’টিকে আমরা জিতেছি। তাই এই সরকার তদন্ত করলে কিছু যায়-আসে না।” গৌতমবাবুর বরং পাল্টা অভিযোগ, নিউটাউনের জন্য নতুন করে আর জমি অধিগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মমতা প্রোমোটারদের সুবিধা করে দিয়েছেন। তাঁর মতে, নিউটাউনের মাস্টার প্ল্যান এলাকার মধ্যে থাকা সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমি হিডকো অধিগ্রহণ না-করলে সেখানে প্রোমোটারদের রমরমা হবে। গৌতমবাবু এ দিন বলেন, “পাঁচ বছর পরে নতুন সরকার (পড়ুন বামেদের সরকার) ক্ষমতা এসে প্রোমোটারদের হাতে এই জমি তুলে দেওয়ার তদন্ত করবে।” পাশাপাশি তাঁর কটাক্ষ, “কোনও কাজ নেই। তাই একের পর তদন্ত ঘোষণা করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।”
দেড় দশক আগে নিউটাউনের জন্মলগ্ন থেকেই বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি। কখনও চেয়ারম্যানের ‘কোটা’ নিয়ে বিতর্ক, কখনও রাতের অন্ধকারে গায়ের জোরে জমি দখলের অভিযোগ, কখনও কম দামে জমি অধিগ্রহণ করে চড়া মূল্যে বিক্রি করে ‘ব্যবসা’ করার অভিযোগ উঠেছে আগের বাম সরকারের বিরুদ্ধে।
বিরোধী থাকাকালীন নিউটাউনে ‘জমি লুটের’ অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। তৃণমূল নেতাদের দাবি ছিল, জমি কেনাবেচা নিয়ে হিডকো যে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে, তাঁরা ক্ষমতায় এলে তার ‘মুখোশ’ খুলে দেবেন। নিউটাউনে গিয়ে এক জনসভায় ফাইলের স্তূপ দেখিয়ে মমতা দাবি করেছিলেন, ওই সব ফাইলে হাজার হাজার মানুষের নানা অভিযোগ রয়েছে।
নিউটাউনের নাম বদলে জ্যোতি বসু নগর করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আগের সরকার, ক্ষমতায় এসে তা-ও বাতিল করে দিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আগের সরকারের আমলে শেষ বোর্ড মিটিংয়ে নেওয়া (এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি) জমি ও ফ্ল্যাট বণ্টনের সিদ্ধান্তও বাতিল করা হয়েছে।
এ বার নিউটাউন নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত শেষ পর্যন্ত অনিয়মের কতটা ‘মুখোশ’ খুলতে পারে, সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|