রফা চায় রাজ্য-চ্যাটার্জি গোষ্ঠী
কোর্টের বাইরে পেট্রোকেম সমস্যা মেটাতে উদ্যোগ
লদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের মালিকানা সমস্যা সমাধানে আপাতত আদালতের রাস্তা এড়াতে চায় দু’পক্ষই। তাই আলোচনার টেবিলে শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে বিবাদ মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী ও রাজ্য সরকার। এই বিবাদে সংস্থা যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা দেখতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই। তা ছাড়া, সংস্থা সম্প্রসারণে আরও ২০০ কোটি টাকা ঢালারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিচালন পর্ষদ।
সোমবার বৈঠকে বসে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের পরিচালন পর্ষদ। পর্ষদে ১৪ জন সদস্য রয়েছেন। আদালতের বাইরে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার বিষয়ে বৈঠকে একমত হয়েছে দু’পক্ষই। সেখানে রাজ্য সরকারের তরফে স্পষ্ট জানানো হয় যে, তাদের হাতে থাকা শেয়ার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে বিক্রি করা হবে কি-না, বা করলে তা কত দামে করা হবে এবং কী ভাবে, সে সব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে পর্ষদকে জানানো হবে। তবে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অসুস্থ থাকার দরুন এ নিয়ে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।
চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। আর রাজ্য সরকারের তরফ থেকে হাজির ছিলেন শিল্পসচিব দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় ও রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নন্দিনী চক্রবর্তী। টেলিফোনের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের রেসিডেন্ট কমিশনার ভাস্কর খুলবে। দু’পক্ষই মনে করে, সংস্থার মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যা না-মিটলে তার বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে ঋণদাতা সংস্থাগুলি নতুন করে আর টাকা ঢালবে না। ফলে সঙ্কট আরও গভীর হবে ঋণের ভারে জর্জরিত এই সংস্থার। তাই আদালতের বাইরেই এই সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া শ্রেয়।
ফ্রণ্টের আমলে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। ওই শেয়ার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কিনে নেওয়ার অধিকারও স্বীকার করে নেয় তারা। কিন্তু তার দাম ও বিক্রির পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধের জেরেই আদালতের দ্বারস্থ হয় চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। কিন্তু সম্প্রতি পদ্ধতিগত কারণে সেই মামলা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তে একমত তৃণমূল জোট সরকারও। কিন্তু নিজেদের হাতে থাকা শেয়ারের দাম নির্ধারণের পদ্ধতি এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিচালন পর্ষদকে জানায়নি রাজ্য সরকার। তবে তাদের একটি প্রস্তাব হল, শেয়ার নিলাম করে তা সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করা। কিন্তু চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর দাবি, সংশ্লিষ্ট চুক্তি অনুযায়ী, কোনও আর্থিক সংস্থাকে দিয়ে মূল্যায়ন করিয়ে সেই দামেই তা তুলে দিতে হবে তাদের হাতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সম্প্রতি হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের মালিকানা সংক্রান্ত গোলমাল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তখন অশোক দেশাই, পি সি সেন ( যিনি হলদিয়া পেট্রোকেমের মালিকানা সংক্রান্ত মামলায় সরকারের হয়ে হাইকোর্টে সওয়াল করেছিলেন) এবং ভি এম খারে (সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি)-র কাছে আইনি পরামর্শ নেয় সংস্থা। তাঁদের পরামর্শ আর্থিক সংস্থাগুলিকে এবং মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে কী বলা হয়েছে, তা জানা যায়নি।
২০০১-এ বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে। সমস্যা শুরু হয়, যখন আর্থিক কারণে ঠিক সময়ে প্রকল্প শেষ করা যাচ্ছিল না। সংস্থার আর্থিক সঙ্কটের সূত্রপাত সেই প্রকল্প শেষ করার জন্য ৯৬৯ কোটি টাকা ঋণ করা নিয়ে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল, প্রয়োজনীয় ৫,১৭০ কোটি টাকার মধ্যে ১,৯৭৯ কোটি আসবে শেয়ার বেচে। আর বাকি ৩,১৯১ কোটি টাকা তোলা হবে ঋণ করে। স্থির হয়েছিল, চ্যাটার্জি গোষ্ঠী ৪৩৩ কোটি, রাজ্য ৪৩৩ কোটি এবং টাটা গোষ্ঠী ১৪৪ কোটি টাকা সংস্থার শেয়ারে লগ্নি করার পরে বাকি ৯৬৯ কোটি তোলা হবে বাজারে শেয়ার বিক্রি করে। কিন্তু বাজারে টানা মন্দা ও প্রকল্পটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনাস্থার কারণে শেয়ার বিক্রির রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ৯৬৯ কোটি টাকার পুরোটাই তুলতে হয় ঋণ করে। চড়া সুদে নেওয়া ওই ঋণই এখন জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে সংস্থার কাঁধে। পরিকল্পনার বাইরে করা ঋণের মাধ্যমে টাকা তোলায় ঋণ ও ইক্যুইটির অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৪.২:১।
তবে এ দিন সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে সম্প্রসারণ পরিকল্পনার কথা। ২০০ কোটি টাকা ঢেলে বুটেন ওয়ান নিষ্কাশনের কারখানা তৈরি করা হবে। এর থেকে বছরে ৮০ কোটি টাকা লাভ হবে বলে সংস্থার দাবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.