বহু ‘ব্র্যান্ডের’ খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির পরে এ বার জীবন বিমা নিগম (সংশোধনী) বিল নিয়েও বামেদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কেন্দ্রের বিরোধিতায় সরব হল তৃণমূল কংগ্রেস। জীবন বিমা নিগম বা এলআইসিতে জমানো টাকা ফেরতের ক্ষেত্রে সরকার এখন যে ‘পূর্ণ’ নিশ্চয়তা দেয়, সংশোধনী বিলে তা বদলে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছিল অর্থ মন্ত্রক। কতটা অর্থ ফেরত দেওয়া হবে, তা সরকার নিজের ‘সুবিধা’ মতো ঠিক করতে চেয়েছিল। কিন্তু এনডিএ ও বাম সাংসদদের পাশাপাশি সরকারের প্রধান শরিক তৃণমূলও এর বিরোধিতা করায় পিছু হঠে কেন্দ্র। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এলআইসিতে জমানো টাকায় এত দিন সরকার যে ‘নিশ্চয়তা’ দিত, তা বজায় থাকবে।
সংসদের চলতি অধিবেশনেই প্রথমে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি, তার পরে এই জীবন বিমা নিগম সংশোধনী বিল দু’টি ক্ষেত্রেই বাম ও বিজেপি-সহ বিরোধীদের পাশাপাশি প্রধান শরিক তৃণমূলেরও প্রবল বাধায় পিছু হটতে হল মনমোহন সিংহের সরকারকে। প্রথম ইউপিএ-জমানায় ‘লাগামছাড়া আর্থিক সংস্কার’-এর যে বিরোধিতা বামেরা করতেন, এখন তৃণমূল সেই জায়গা দখল করেছে বলে মানছেন বাম নেতৃত্বও। এখন সরকারের চিন্তা পেনশন তহবিল বিল। অনেকেই মনে করছেন, এই বিলেও বামেদের সুরেই বিরোধিতা করবে তৃণমূল। এ দিন বিতর্কের সময় বিরোধিতা করলেও বিলটি নিয়ে ভোটাভুটির সময় সরকার এবং এনডিএ-র শরিক দলগুলি কেন্দ্রের পাশেই দাঁড়ায়। বামেরা অবশ্য বিরোধিতা করে।
বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলির সঙ্গে এলআইসি-কেও একই স্তরে আনার জন্য আজকের সংশোধনী বিলটি আনে কেন্দ্র। কংগ্রেস বাদে বাকি দলগুলির অভিযোগ, এই বিলের মাধ্যমে বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলির সঙ্গে এলআইসি-র মূল ফারাকটাই মোছার চেষ্টা হচ্ছে। বিমা ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় এলআইসি-র এগিয়ে থাকার কারণ হল, সেখানে টাকা খোওয়া যাওয়ার ভয় নেই। সরকার নিজে সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়। বিরোধীদের অভিযোগ, সংশোধনী বিলে প্রস্তাব ছিল, এখন থেকে কতটা নিশ্চয়তা থাকবে, তা সরকার ঠিক করবে। এর প্রতিবাদে অন্য দলগুলির সঙ্গে সরব হন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। চাপের মুখে সরকার প্রতিশ্রুতি দেয়, বিনিয়োগকারীদের অর্থে সরকারের ‘গ্যারান্টি’ বজায় থাকবে। বিল পাশ করানোর সময় এ বিষয়ে ভোটাভুটির দাবি করার পরিকল্পনা ছিল সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তর। কিন্তু তার আগেই অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁকে ডেকে জানিয়ে দেন, সরকারি নিশ্চয়তার বিষয়টি লঘু করা হচ্ছে না।
বিলে এলআইসিতে ন্যূনতম পুঁজির পরিমাণ ৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, পরে আরও পুঁজির প্রয়োজন হলে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে। বামেদের অভিযোগ, মলহোত্র কমিটি এলআইসি-র ৫০ শতাংশ বিলগ্নিকরণের সুপারিশ করেছিল। এই ভাবে সেই পথ খোলা রাখা হচ্ছে। কল্যাণবাবু বলেন, “পরে বাড়তি পুঁজির প্রয়োজন হলেও সংসদের অনুমতি নিতে হবে।” কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী নমোনারায়ণ মীনা প্রতিশ্রুতি দেন, বাড়তি পুঁজির অর্থ সংসদই বরাদ্দ করবে। এলআইসি-র এজেন্টদের সুযোগ-সুবিধায় যাতে বদল না হয়, সে ব্যাপারেও দাবি তোলেন কল্যাণ।
এত দিন এলআইসি বাড়তি লভ্যাংশের ৯৫ শতাংশ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিলি করত। বিলে তা কমিয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলির মতোই বাড়তি লভ্যাংশের ৯০ শতাংশ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিলি করার কথা বলা হয়। এই ব্যাপারেও এক সুরে বিরোধিতা করে বাম-তৃণমূল। সরকারের যুক্তি, যারা ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করেছেন, তাদের জন্য নিয়ম বদল হবে না। বিল পাশ হওয়ার সময় সিপিএমের বংশগোপাল চৌধুরী ভোটাভুটি চান। সে সময় লোকসভায় হাতে গোণা কংগ্রেস সাংসদ উপস্থিত ছিলেন। ফলে চাপে পড়ে যায় সরকার-পক্ষ। শেষ পর্যন্ত এনডিএ এবং শরিক দলগুলি সরকারের পক্ষেই ভোট দিয়ে ত্রাতার ভূমিকা নেয়। ভোটাভুটিতে হেরে বামেরা কক্ষত্যাগ করে। |