বহু বছর পরে হওয়া পরিচালন সমিতির ভোটকে কেন্দ্র করে যেখানে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ বেধেছিল রবিবার, অন্ডালের সেই খান্দরা হাইস্কুলে সব ক’টি আসনেই জয়ী হল সিপিএম। ভোটে হারের পরে রবিবার রাতে তৃণমূলের লোকজন স্থানীয় এক সিপিএম নেতার বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
ভোটের আগে থেকে তৃণমূল দাবি করছিল, বহু বছর ধরে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন করতে না দিয়ে এই স্কুলের পরিচালন সমিতিতে ক্ষমতা ধরে রেখেছে সিপিএম। ভোট হলেই ক্ষমতা হারাবে তারা। রবিবার দুপুরে ভোট চলাকালীন দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। জখম হন দু’পক্ষের অন্তত কুড়ি জন। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পাঁচ পুলিশকর্মীও জখম হন। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। এই ঘটনার পরে তৃণমূলের অন্ডাল ব্লক সভাপতি কাঞ্চন মিত্র দাবি করেছিলেন, হার নিশ্চিত জেনেই হামলা চালিয়েছে সিপিএম। রাত ৮টা নাগাদ ফল বেরোতে দেখা যায়, ছ’টি আসনের সব ক’টিতেই হেরেছেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। ফল বেরোনোর পরে কাঞ্চনবাবুর অবশ্য দাবি, “সিপিএমের সন্ত্রাসের জেরেই এমন ফল হয়েছে। ওদের হামলায় ভয় পেয়ে আমাদের ভোটারেরা বাড়ি চলে যান। ছাপ্পা ভোট দিয়ে জিতেছে ওরা।” |
সিপিএমের অভিযোগ, ফল বেরোনোর কিছু ক্ষণ পরেই তাদের স্থানীয় নেতা, ময়রা কোলিয়ারি এলাকার বাসিন্দা অঞ্জন বক্সীর বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলের লোকজন। অঞ্জনবাবুর স্ত্রী শোভনাদেবী অভিযোগ করেন, রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ এক দল লোক প্রথমে জানালা-দরজায় ধাক্কা মারতে থাকে। সেই সময়ে অঞ্জনবাবু বাড়িতে ছিলেন না। ওই সব দুষ্কৃতীরা বাড়ির বাইরের দরজা ভেঙে ঢুকে উঠোনের ফুলগাছ তছনছ করে। তার পরে তারা গুলি চালায়। শোভনাদেবীর বাবা নীরোদবরণ মুকোপাধ্যায়ের দাবি, পুলিশ এসে গুলির খোল নিয়ে চলে যায়।
সোমবার সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তুফান মণ্ডলের অভিযোগ, “এ দিন সকালে শোভনাদেবী কয়েক জন পড়শিকে নিয়ে অন্ডাল থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ জানায়, অভিযোগপত্র থেকে গুলি চালানোর বিষয়টি বাদ দিতে হবে। তা শুনে তাঁরা ফিরে আসেন।” বিকেলে দুর্গাপুরের অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ সুপার শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেন, “পুলিশ কেন অভিযোগ নেয়নি, খোঁজ নিয়ে দেখছি।” এর পরেই সন্ধ্যায় অন্ডাল থানায় হামলার অভিযোগ দায়ের হয়।
তুফানবাবুর দাবি, “ওরা আমাদের উপরে হামলা চালাল। তা সত্ত্বেও পুলিশ এসে আমাদের নেতা-কর্মীদের মারধর করে ধরে নিয়ে গেল। এত সবের পরেও আমরা জিতলাম। মানুষ যে তৃণমূলের স্বরূপ বুঝতে পারছেন, তা এই ভোটের ফল থেকেই পরিষ্কার।” এ দিকে, কংগ্রেসের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সাধারণ সম্পাদক তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়ের আবার দাবি, “এলাকায় তৃণমূলের প্রভাবশালী গোষ্ঠী এই স্কুলের ভোটে জোটের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারেননি। তাই ওদের অন্য একটি গোষ্ঠী চাইলেও আমাদের সঙ্গে জোট গড়েনি। তার জেরেই এমন ফল হয়েছে।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি কাঞ্চনবাবু অবশ্য বলেন, “এ সব মনগড়া কথাবার্তা।” সিপিএম নেতার বাড়িতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে তাঁর পাল্টা দাবি, “সহানুভূতি কুড়োতে এ সব মিথ্যা অভিযোগ করছে ওরা।” অন্ডাল থানার পুলিশ জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। |