কোচবিহার কিংবা রায়গঞ্জ, হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে একই রকম উদাসীনতায় উদ্বিগ্ন জনপ্রতিনিধিরা। রবিবার কোচবিহার জেলা হাসপাতাল এবং লাগোয়া এলাকার কয়েকটি নার্সিংহোম পরিদর্শন করেন এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান নাটাবাড়ির বিধায়ক তৃণমূলের রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। কোচবিহার হাসপাতাল লাগোয়া বেশ কয়েকটি দোকানে বেআইনি ভাবে সিলিন্ডার বিক্রি অভিযোগে ওঠায় সেগুলি সিল করানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেও রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন তিনি। রায়গঞ্জে এ দিন এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক তথা পুর চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্ত শহরের ৫টি নার্সিংহোম পরিদর্শন করেন। আজ, সোমবার শহরের নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে ডেকেছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক। কংগ্রেস বিধায়ক বলেন, “শহরের বেশির ভাগ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অগ্নিনির্বাপন বিধি মানছেন না বলে অভিযোগ পেয়েছি। এদিন পরিদর্শনে গিয়েও নানা অনিয়ম চোখে পড়েছে। বৈঠকে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে ডেকে সতর্ক করার পাশাপাশি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেব। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁরা অগ্নিনির্বাপন বিধি না মানলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘হাসপাতাল ও শহরের একাধিক নার্সিংহোম জতুগৃহ হয়ে রয়েছে। জেলা হাসপাতাল লাগোয়া এলাকায় বেআইনি ভাবে রান্নার গ্যাসের ব্যবসা হচ্ছে। একটি নার্সিংহোমে অগ্নিনির্বাপণের কোনও পরিকাঠামোই নেই। সব কিছু নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট পাঠিয়েছি।’’ |
গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের দমকল মন্ত্রী জাভেদ খানের সঙ্গেও কথা বলে পরিস্থিতির তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল জেলায় পাঠানর আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। এদিন সকালে এনবিএসটিসি চেয়ারম্যান জেলা সদর হাসপাতাল ও লাগোয়া চত্বরে হানা দেন। প্রকাশ্যে রান্নার গ্যাস বিক্রির কারবার কী ভাবে হচ্ছে জানতে একটি দোকানে ঢুকতেই সেখানকার কর্মী গা ঢাকা দেন। তারপরেই রবীন্দ্রনাথবাবু দমকল ও পুলিশে খবর দেন। ওই দোকান দমকল কর্মীরা সিল করে দেন। হাসপাতাল লাগোয়া চত্বরে আরও কয়েকটি দোকানেও একই ভাবে ব্যবসা কী করে হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। জেলা হাসপাতালের বেহাল ওয়্যারিং থেকে শর্ট সার্কিট হতে পারে বলে রোগীর আত্মীয়রা তাঁকে উদ্বেগের কথা জানান। পরে হাসপাতাল লাগোয়া এলাকার একটি নার্সিংহোমেও যান তিনি। কোচবিহার দমকল কেন্দ্রের ওসি মলয় ঘোষ বলেন, “আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। যারা ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছেন তারা কেন দমকলের ছাড়পত্র দেখবেন না।’’ কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানিক দাস জানান, নার্সিংহোমগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বরাদ্দ এলে জেলা হাসপাতালের ওয়্যারিং মেরামত হবে। রায়গঞ্জে মোহিতবাবুর সঙ্গে নার্সিংহোম পরিদর্শনে যান পুরসভার কাউন্সিলর পবিত্র চন্দ, সন্দীপ বিশ্বাস-সহ দমকল, পুলিশ ও পুরসভার বিদ্যুৎ বিভাগের আধিকারিকেরা। শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোম পরিদর্শন করার পরে সেগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর অভিযোগ, একাধিক নার্সিংহোমে আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার, ফায়ার অ্যালার্মিং সিস্টেম, বহুতল নার্সিংহোমগুলিতে একাধিক সিড়ি, অত্যাধুনিক লিফট ও ফায়ার লাইসেন্স নেই। দমকল কর্তাদের বিষয়টিগুলি দেখার নির্দেশ দেন তিনি। দমকলের ওসি নিতাইচন্দ্র মন্ডল বলেন, “শহরের একাধিক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ দমকল বিধি মানছেন না বলে জানা গিয়েছে। খুব শীঘ্রই আমরা অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলব। তারপরও কোনও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অগ্নিনির্বাপণ বিধি না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |