মানা হয়নি দমকলের সুপারিশ
স্যুইচ বোর্ডে আগুন, বর্ধমান মেডিক্যালে আমরি-আতঙ্ক
ছ’মাসের মধ্যে দ্বিতীয় বার আগুন লাগল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে। আকারে সামান্য হলেও রবিবারের ওই ঘটনা ফের ‘বেআব্রু’ করে দিল সরকারি হাসপাতালে অগ্নি-নির্বাপণ নিয়ে কর্তৃপক্ষের ‘উদাসীনতা’র ছবি। আমরি-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে এই ‘মানসিকতা’ কতটা যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন করতে গিয়ে জানা গেল, দমকলের সুপারিশ মেনে অগ্নি নির্বাপণের সাত দফা ব্যবস্থা তো দূর, এখনও ‘ফায়ার লাইসেন্স’ও নিয়ে উঠতে পারেননি বর্ধমান মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ।
সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কয়েক বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে এই হাসপাতালে। গত ১৭ জুলাই শিশু ওয়ার্ডে একটি স্যুইচ বোর্ডে আগুন লেগে ধোঁয়া বেরোনোয় আতঙ্ক ছড়ায়। শিশুদের নিয়ে দলে দলে ওয়ার্ড ছাড়েন মায়েরা। ওই ঘটনার পরে হাসপাতাল পরিদর্শনে যান দমকলের বর্ধমানের কর্তারা। গত ৬ অগস্ট দমকলের তরফে অগ্নি নির্বাপণের জন্য মোট সাত দফা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। দমকলের ওসি (বর্ধমান সদর) তপন মুখোপাধ্যায় রবিবার বলেন, “আমরা বারবারখোঁজ নিয়ে দেখেছি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে এখনও কোনও ব্যবস্থাই নেননি।”
ওই হাসপাতালের রাধারানি ওয়ার্ডে ৩ ও ৪ নম্বর ব্লকের করিডরের বিদ্যুতের স্যুইচ বোর্ডে এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ আচমকাই আগুনের ঝলক দেখা যায়। আতঙ্ক ছড়ায় রোগীদের মধ্যে। ওয়ার্ড ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। রোগীর আত্মীয়েরা ওয়ার্ড মাস্টারের অফিসে গিয়ে ঘটনার কথা জানালে ঘটনাস্থলে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা। বিদ্যুতের মেইন স্যুইচের ‘গ্রিপ’ খুলে দেন তাঁরা। তার পরে জল ঢেলে আগুন নেভানো হয়।
আগের অগ্নিকাণ্ডের পরে দমকল যে সাত দফা নির্দেশ দিয়েছিল, সেগুলি কী কী?
তপনবাবু জানান, যেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্পিরিট, এসি মেশিন, ওয়ার্মার, ব্লাড ব্যাঙ্ক, অপারেশন থিয়েটার ইত্যাদি থাকবে, সেখানে বাধ্যতামূলক ভাবে অগ্নি নির্বাপক বসাতে হবে। মান্ধাতার আমলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বদলে ফেলতে হবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সব বিভাগের দু’জন করে কর্মীকে দমকলের কাছ থেকে আগুন নেভানোর পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। লাগাতে হবে ‘ফায়ার অ্যালার্ম’ ও ‘স্মোক ডিটেক্টর’। আর এই সমস্ত ব্যবস্থা করার পরে দমকল দফতরের কাছ থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ নিতে হবে হাসপাতালকে।
কেন মানা হল না সে সুপারিশ?
সুপার গদাধর মিত্র বলেন, “আমার আগের সুপারের আমলে দমকল ওই নির্দেশগুলি দিয়েছে বলে জানি। এ ব্যাপারে খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারব না।” ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “গোটা হাসপাতালে বিদ্যুতের লাইন বদলানোর কাজ শুরু হয়েছে। রাধারানি ওয়ার্ডেও এই কাজ শীঘ্র শুরু হবে। সম্ভবত মান্ধাতার আমলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্যই এই আগুনের ঝলক ও ধোঁয়া দেখা গিয়েছে। তবে আমরা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেছি।”
এ দিনের আগুন দ্রুত নেভানো হলেও, বর্ধমান মেডিক্যালের সমস্যা যে মিটে যাচ্ছে না তা জানিয়ে দমকলের ওসি তপনবাবু বলেন, “এখনও পর্যন্ত কোনও ফায়ার লাইসেন্স নেই ওই হাসপাতালের। আমাদের কাছ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নো অবজেকশন সার্টিফিকেটও নেননি। অথচ, তা নেওয়া বাধ্যতামূলক। যে কোনও দিন বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে কিন্তু কিছু করার থাকবে না।”
ঘটনায় চিন্তিত রোগীরা। মেমারির বাসিন্দা মেহের আলি মণ্ডল বললেন, “প্রায়ই খবর পাই এই হাসপাতালের
কোথাও না কোথাও আগুন লেগেছে। আমরি-তে যা হল, তা তো এখানেও হতে পারে। বর্ধমান মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ সজাগ হচ্ছেন না কেন?” আর এক রোগী, মন্তেশ্বরের নীলা বৈরাগ্য বলেন, “ধোঁয়া দেখে ওয়ার্ড ছেড়ে পালিয়েছিলাম। মনে হল, আমরি-র মতো কাণ্ড ঘটবে। রোগ সারুক বা না সারুক, আর এই হাসপাতালে থাকতে চাই না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.