দুই জেলার শহর ও শহরতলিতে গত কয়েক দশকে ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নার্সিংহোম-বেসরকারি হাসপাতাল। কিন্তু দু’-একটি ছাড়া উপযুক্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই কোনওটিতেই। ঢাকুরিয়ার ‘আমরি’ হাসপাতালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর তাই নড়েচড়ে বসেছেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দফতরসকলেই।
এই পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা বুঝতে আজ, সোমবার জরুরি বৈঠক বসছে মেদিনীপুর জেলা নার্সিংহোম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায় এই বৈঠক হওয়ার কথা। অন্য দিকে, দফতরের অন্য আধিকারিকদের নিয়ে শীঘ্রই বৈঠকে বসতে চলেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র। জেলার নার্সিংহোম-বেসরকারি হাসপাতালগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখতেই এই বৈঠক। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “প্রত্যেক নার্সিংহোম-হাসপাতালেই অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাসপাতালের মধ্যে কোথাও দাহ্য বস্তু মজুত রাখা যাবে না। এ বার থেকে বেসরকারি হাসপাতালে পরিদর্শন হবে নিয়মিত। কোথাও অব্যবস্থা চোখে পড়লেই উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
সরকারি চিকিৎসা পরিবেষায় ‘ভরসা’ নেই মানুষের। এই সুযোগেই দুই মেদিনীপুরের যত্রতত্র নার্সিংহোম গড়ে উঠেছে। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরে দু’শোটিরও বেশি নার্সিংহোম রয়েছে। নিয়মের বালাই নেই। খাস মেদিনীপুর-খড়্গপুরের মতো শহরেও ঘিঞ্জি এলাকায় নার্সিংহোম রয়েছে। স্রেফ ট্রেড লাইসেন্স ও স্বাস্থ্য দফতরের সার্টিফিকেট রেখেই ‘ব্যবসা’ চালাচ্ছে নার্সিংহোমগুলি। সুরক্ষার উপর কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। কোথাও চার-পাঁচ তলা হাসপাতালে মাত্র পাঁচটি ফায়ার ‘এক্সটিংগুইসার সিলিন্ডার’ লাগিয়েই দায় সেরেছেন কর্তৃপক্ষ। কোথাও আবার একটি সিলিন্ডারও নেই! হঠাৎ আগুন লাগবে কী হবে, তার কোনও সদুত্তর নেই কারও কাছে। জেলার এক নাসির্ংহোমের আধিকারিকের কথায়, “কী করণীয় তাই জানা ছিল না। হাসপাতালের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা যেটুকু করার করেছি। এ ব্যাপারে দমকল কর্তৃপক্ষও আগে কিছু বলেননি!” নার্সিংহোম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কালীপদ জানা বলেন, “ঢাকুরিয়ার ঘটনা আমাদের সকলকেই সতর্ক করেছে। এমন ঘটনা ভাবা যায় না। নার্সিংহোমগুলিতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কী করণীয়, সে সম্পর্কে অলোচনা করতেই এই বৈঠক।”
এ বার থেকে অবশ্য নার্সিংহোমগুলির সুরক্ষা ব্যবস্থার দিকে কড়া নজর রাখা হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। ত্রুটি থাকলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার নেওয়ারও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “রোগী-সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুরক্ষার কথাও ভাবতে হবে। পরিদর্শনের সময় ত্রুটি ধরা পড়লেই উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
এ দিকে, খোদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একাধিক রুম ‘জতুগৃহ’ হয়ে আছে বলে অভিযোগ। কোথাও মজুত রয়েছে দাহ্য বস্তু। হাসপাতালের রেকর্ড রুমে কাগজপত্রের ‘পাহাড়’ রয়েছে। মেডিক্যালের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডও অগ্নি নির্বাপণের দিক থেকে অসুরক্ষিত। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এ বার প্রতিটি ওয়ার্ড সুরক্ষিত করতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। রেকর্ড রুম, স্টোর রুম-সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে সব মিলিয়ে ১৯টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ, সোমবার এক বৈঠক হওয়ার কথা। বৈঠকে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ সুকুমার মাইতি বলেন, “অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “১৯টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার লাগানোর সিদ্ধান্ত আগে হয়েছে। তেমন হলে আরও কয়েকটি জায়গায় তা লাগানো হবে।” |