আমরির ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছে দমকল দফতর থেকে শুরু করে পুরসভা। রবিবারই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোম ও কিছু নির্মীয়মান বাড়ি ঘুরে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার সরেজমিনে তদন্ত শুরু করেছেন। আর এরই মধ্যে ধরা পড়েছে একাধিক অনিয়ম। শুধু তাই নয়, যে সব নির্মীয়মান বহুতলে অনিয়ম ধরা পড়েছে সেগুলির মালিককে এই দিনই চিঠি দিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রধান অসীম সাহা বলেন, “আমরির ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে শিক্ষা দিয়েছে। আমরা আর কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নই।”
রবিবার কৃষ্ণনগর পুরসভার একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল নির্মীয়মান বহুতলগুলি ঘুরে দেখেন। তখনই অনিয়মগুলি ধরা পড়ে। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, গোলাপট্টির একটি বহুতলের যে পরিকল্পনা পুরসভা অনুমোদন করেছিল, তাতে দমকলের গাড়ি যাওয়ার জন্য বিধি মতো জায়গা ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে নকশায় দেখানো হলেও, আসলে তা করা হয়নি। একই অভিযোগ উঠেছে, পাত্রবাজারের একটি নির্মীয়মান বহুতলের ক্ষেত্রেও। পুরপ্রধান বলেন, “ওই দু’টি নির্মীয়মান বহুতলের মালিকদের পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, যেটুকু নির্মাণকাজ হয়েছে তা ভেঙে ফেলে নতুন করে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ীই নির্মাণ করতে হবে।” রবিবারই রাধানগর এলাকার একটি বাড়ির ‘প্ল্যান’-ও আটকে দেওয়া হয়েছে। ওই বাড়ির নকশায় বেশ কিছু গড়মিল ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন অসীমবাবু।
এই দিনই বিভিন্ন নার্সিংহোমের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন দমকল বিভাগের কর্তারা। এই দিন তাঁরা তিনটি নার্সিংহোমের আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ঘুরে দেখেন। এই তিনটি নার্সিংহোমের কোনওটিরই দমকল দফতর থেকে অনুমতিপত্র বা এনওসি নেওয়া নেই বলে জানানো হয়েছে দমকল দফতর সূত্রে। কৃষ্ণনগরে দমকলের ওসি হরলাল সরকার বলেন, “আমরা নার্সিংহোমগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছি। যে তিনটি দেখা হয়েছে, তার কোনওটিতেই অগ্নি নির্বাপণের ন্যূনতম বন্দোবস্ত নেই। দু’একটি করে যে আগুন নেভানোর সিলিন্ডার রয়েছে, তা ব্যবহারের অনুপোযোগী।”
|
কী কী করতে হবে |
• প্রতিটি নার্সিংহোম ও হাসপাতালে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে।
যেমন আগুন নেভানোর জন্য জল, সিলিন্ডার, বালি ও বালতি থাকা জরুরি।
• আগুন নেভানোর জন্য জল যাতে প্রতিটি তলায় পাইপলাইনের
মাধ্যমে সরবরাহ করা যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
• প্রতিটি তলায় প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণের পথের নির্দেশিকা দরজায় লাগিয়ে রাখতে হবে।
• প্রতিটি বহুতলে দু’টি চওড়া সিঁড়ি রাখতে হবে।
• হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে রান্নার ব্যবস্থা বাড়ির ভিতরে করা যাবে না।
রান্নার জায়গার জন্য আলাদা করে দমকলের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
• প্রতিটি ঘরে পর্যাপ্ত হাওয়া-বাতাস যাতে ঢোকে, তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। • কোনওরকম দাহ্য পরিত্যক্ত বস্তু বাড়ির ভিতরে রাখা যাবে না।
• ধোঁয়া, গ্যাস বেরোলে যাতে তা সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায়, তার জন্য
অ্যালার্ম রাখতে হবে। ফায়ার-অ্যালার্মও রাখা বাধ্যতামূলক। |
|
এরপরে পুরসভা, দমকল দফতর ও মহকুমা প্রশাসনের একটি মিলিত দল সরেজমিন তদন্তে নামবে বলেও জানানো হয়েছে। মহকুমা শাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, “আমরা টিম তৈরি করে নার্সিংহোমগুলি ঘুরে দেখব। অনিয়ম ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” হরলালবাবু বলেন, “আমরা সব নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকেই বলছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমাদের অনুমতিপত্র এবং এনওসি সংগ্রহ করতে হবে। পাশাপাশি আগুন নেভানোর জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তবে শুধু নার্সিংহোম নয়, প্রশাসনের নজর থাকছে শহরের বহুতল ও বাজারগুলির উপরেও। শহরের বেশিরভাগ বাজারেই আগুন নেভানোর আয়োজন যথেষ্ট নয়। প্রথমত, বাজারে ঢোকার রাস্তাই এত সরু যে আগুন লাগলে ঢোকা-বেরোনোই কষ্টকর। ঘিঞ্জি বাজার এলাকায় বিদ্যুতের তারগুলোও ঝুলে রয়েছে বিপজ্জনক ভাবে। ফলে যে কোনও মুহূর্তে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। হরলালবাবু বলেন, “বাজারগুলির উপরে আমরা নজর রাখছি। বাজারগুলো ঘুরে দেখে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” |