বহুতল ও নার্সিংহোমের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য জয়েন্ট ইনস্পেকশন কমিটি গঠন করা হবে আসানসোল ও দুর্গাপুরে। কলকাতায় আমরি-তে বিপর্যয়ের পরে এমনটাই জানালেন পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ। শনিবার আসানসোলের শরৎ মঞ্চে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, দমকলের তরফে জানানো হয়, আসানসোলের কোনও নার্সিংহোমেরই দমকলের ছাড়পত্র নেই।
শহরের নার্সিংহোমগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার বিষয়ে জানার জন্য পুলিশের তরফে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। পৌরহিত্য করেন পুলিশ কমিশনার। ডাকা হয় আসানসোলের দমকল বিভাগকেও। দমকলের ওসি সেলিম জাভেদ বলেন, “আসানসোলের একটি নার্সিংহোমেরও দমকলের ছাড়পত্র নেই।” তিনি জানান, নার্সিংহোম, শপিং মল বা বহুতলের মতো জায়গা যেখানে প্রতি দিন বহু মানুষের যাতায়াত হয় সেখানে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হয়। প্রয়োজনে দমকলের গাড়ি ঢোকা বেরোনোর জন্য প্রশস্ত রাস্তা রাখতে হয়। দমকল বিভাগের পক্ষ থেকে এ সব দেখার পরে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হয়ে ছাড়পত্র দিলেই নির্মাণ কাজ করা যায়।
দমকল কর্তৃপক্ষের এই অভিযোগ যে সত্য, তা জানা যায় কয়েক জন নাসির্ংহোম মালিকের সঙ্গে কথা বললেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা বাম সরকারের আমলে স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য, শল্য চিকিৎসক প্রতিভারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের নার্সিংহোমেও দমকলের ছাড়পত্র নেই। প্রতিভারঞ্জনবাবু বলেন, “আমি যখন নার্সিংহোম গড়েছিলাম তখন দমকলের ছাড়পত্র নিতে হত না। তবে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা আছে। আরও কিছু নতুন করে লাগাব। দমকলের ছাড়পত্র নেওয়ার নির্দেশ এলে নেব।” আসানসোলের সেনর্যালে রোডের পাশে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার সুনীল গুপ্ত জানান, বেশ কয়েক বছর আগে তাঁরা দমকলের ছাড়পত্র নিয়েছিলেন। সেটি এখন কী অবস্থায় আছে বা কোথায় আছে, তার কোনও হদিস পাচ্ছেন না নিজেরাই। তিনি বলেন, “সম্প্রতি প্রশাসনের তরফে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বিষয়ে কিছু নির্দেশাবলী আমাদের দিয়েছেন। আমরা সেগুলি কঠোর ভাবে পালনে উদ্যোগী হয়েছি।” |
অধিকাংশ নার্সিংহোমের সামনেই নেই দমকলের গাড়ি ঢোকার রাস্তা। নিজস্ব চিত্র। |
দমকলের ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে কী ভাবে নার্সিংহোমগুলি ব্যবসা চালাচ্ছে? মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অরিতা সেন চট্টোরাজ বলেন, “বিষয়টি আসলে পুর কর্তৃপক্ষের দেখার কথা। তবে এ বার আমরা পুরসভার সঙ্গে যৌথ ভাবে বিষয়টি দেখব।” তিনি জানান, ‘ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এস্টাবলিসমেন্ট’ আইন মোতাবেক নার্সিংহোমগুলিতে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক নির্দেশাবলী ঠিক ভাবে মানা হয়েছে কি না সেগুলি তাঁরা দেখেন। তবে নার্সিংহোমের অনুমতি দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন কিনা সেটা স্বাস্থ্য দফতর দেখে নেয়। মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, পুরসভা ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার সময়ে পরীক্ষা করে নেয় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ দমকলের ছাড়পত্র নিয়েছেন কি না। অর্থাৎ দমকলের ছাড়পত্র না থাকলে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার কথা নয়। আর ট্রেড লাইসেন্স পেলে অবশ্যই ধরে নেওয়া হয় দমকলের ছাড়পত্র আছে।
আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “এত সব জানি না। আমরা পুরসভায় ক্ষমতায় এসেছি আড়াই বছর। এই সময়ের মধ্যে নতুন কোনও নার্সিংহোম গড়ে ওঠেনি। যেগুলি আছে সেগুলি সব পুরনো।” তবে মঙ্গলবার থেকেই তাঁরা বিশেষ অভিযানে নামবেন বলে আশ্বাস দেন। তিনি আরও জানান, দমকলের ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য নার্সিংহোমগুলিকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। তা না নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তাপসবাবু জানান, নার্সিংহোমগুলিতে ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা প্রশস্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে প্রয়োজনে বিনা বাধায় দমকলের গাড়ি ঢুকতে পারে।
আসানসোলের দমকল বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, আসানসোলে ৪২টি নার্সিংহোম রয়েছে। কোনওটিই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অনুমোদন নেয়নি। এমনকী বহুতল নির্মাণ সংস্থাগুলিও এই অনুমোদন নেয়নি। পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে দমকলেরও। আসানসোল দমকল দফতরের ৩৫টি ফুটের বেশি লম্বা মই নেই। অর্থাৎ, তার বেশি উঁচুতে কোনও ঘটনা ঘটলে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া দমকলের কিছু করার নেই। মেয়র তাপসবাবু অবশ্য লম্বা মই কিনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
শনিবার শরৎ মঞ্চে মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুরজিৎ দত্তশর্মা জানান, নির্মাণের নকশা, দূষণের শংসাপত্র, অগ্নি নির্বাপণের অনুমোদন, নার্সিংহোমের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন নিয়েও অনেক নার্সিংহোম ও বহুতলে কোনও বিধি মানা হচ্ছে না। তাঁর মতে, অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রেও সব কিছু খতিয়ে দেখা উচিত। না হলে বিপর্যয়ের দায় কেউই এড়াতে পারবে না। |