স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সেই অবস্থার মধ্যেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসব করানোর ক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য পেল পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রকল্প থেকে সম্প্রতি এই জেলার পাঁচটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে এ জন্য দেড় লক্ষ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে চারটিই জেলার মাওবাদী উপদ্রুত এলাকার। যে দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এ ক্ষেত্রে পুরস্কৃত হয়েছে, তার মধ্যেও জঙ্গলমহল এলাকার একটি রয়েছে। তারা ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার পেয়েছে। তবে, জেলার অন্যান্য এলাকার ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে এই সফলতা না পাওয়ার জন্য পুরুলিয়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর পরিকাঠামোর অভাব ও প্রচারের কাজে ঘাটতি রয়েছে বলে স্বীকার করেছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য গর্ভবতীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রাথমিক ও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকেও সন্তান প্রসব করানোর জন্য উৎসাহ দিতে পুরস্কার চালু করা হয়েছিল। পুরস্কারের জন্য ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির প্রসবের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল বছরে ১৫০০ থেকে ২৫০০টি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল বছরে ৩০০ থেকে ১০০০টি। ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসব করানোর জন্য পুরস্কারের তালিকায় মানবাজারের সঙ্গে জঙ্গলমহলের ঝালদা, কোটশিলা, বরাবাজার ও বলরামপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নাম উঠে এসেছে। সব থেকে বেশি সন্তান প্রসব হয়েছে মানবাজার বিপিএইচসি-তে (প্রায় ২৪০০টি)। পুরস্কার পেয়েছে পুরুলিয়া ২ ব্লকের হুটমুড়া ও বান্দোয়ানের চিরুডি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
মা ও সদ্যজাত শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা কমাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার গত কয়েক বছর ধরে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে। গ্রামের হাতুড়ের বদলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসব করানোর জন্য উৎসাহ দিতে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রকল্পে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জননী সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পে গর্ভবতীদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার জন্য টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সন্তান প্রসব করানোর জন্য প্রসূতিদের বিনা ভাড়ায় গাড়ি করে বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। সন্তানের জন্মের পরে শিশুর পরিচর্যার জন্য পোশাক, তোয়ালে, মশারি ইত্যাদিও দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গলমহল এলাকার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সফলতার কারণ কী? বান্দোয়ানের বিএমওএইচ অবিনাশ বেসরা ও বরাবাজারের বিএমওএইচ পরিতোষ সরেনের মতে, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য আর্থিক সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি গ্রামাঞ্চলের প্রসূতিদের বিশেষ উৎসাহ জুগিয়েছে। গর্ভবতী হওয়ার পরেই অনেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে আসছেন।” মানবাজারের বিএমওএইচ সুরজিৎ সিংহ হাঁসদার ব্যাখ্যা, “আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কথা গ্রামে গ্রামে গিয়ে আশা প্রকল্পের কর্মীরা প্রচার করছেন। তাঁরা ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও এ ক্ষেত্রে খুব যত্নবান। সবার প্রচেষ্টায় এই সাফল্য পাওয়া গিয়েছে।”
এই জেলার ২০টি বিপিএইচসি’র মধ্যে ৫টি বিপিএইচসি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে। বাকিরা পারলো না কেন? জেলা মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য আধিকারিক আজিজুর রহমান বলেন, “জঙ্গলমহল-সহ জেলার অন্যান্য এলাকার বিপিএইচসি গুলিতে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। তা সত্বেও সামগ্রিক ভাবে জেলায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসব করানোর সংখ্যা বেড়েছে। তবে, নানা কারণে জঙ্গলমহলে এই সংখ্যাটা বেশি। প্রচার ও পরিকাঠামোর যে ঘাটতি রয়েছে তা দ্রুত মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” তিনি জানান, জেলার বেশ কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখনও অন্তর্বিভাগ চালু হয়নি। শীঘ্রই প্রথম দফায় ২০টি পিএইচসিতে অন্তর্বিভাগ চালু করা হচ্ছে। ধাপে ধাপে অন্য পিএইচসিগুলিতেও তা চালু করা হবে। |