নার্সিংহোম নয়, অন্তত বেশ কয়েকটি বহুতলে আগুন নেভানোর কোনও পরিকাঠামোই নেই শিলিগুড়ি শহরে। হিলকার্ট রোড, সেবক রোড, বিধান রোড ঘেঁষেই শুধু নয়, খালপাড়া, হাকিমপাড়া থেকে সর্বত্র বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। এদের অধিকাংশেরই কোনও ‘ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট’ নেই। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার নূন্যতম ব্যবস্থাটাও অনেকে করেননি। কিছুদিন আগে সেবক রোডে একটি বহুতল কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর দমকল কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এফআইআর করা হয়। বিষয়টি নিয়ে পুরসভা, প্রশাসন, দমকল কর্তৃপক্ষ বার বার বৈঠক করলেও কোনও লাভ হয়নি। কলকাতায় অগ্নিকাণ্ডের পর শিলিগুড়ির বহুতলগুলি নিয়েও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। উত্তরবঙ্গের দমকল কেন্দ্রের আধিকারিক উদয় অধিকারী বলেন, “শিলিগুড়িতে বেশ কয়েকটি বহুতলের কোনও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। তা নিয়ে বার বার ওই বহুতল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।” দমকল সূত্রের খবর, এখনও প্রতিদিন শিলিগুড়িতে যে পরিমান বহুতল তৈরি হচ্ছে তার অধিকাংশের আধুনিক মানের কোনও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। দমকল কর্তৃপক্ষেও সমস্ত ভবনগুলিকে এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি। একটি করে অগ্নিকাণ্ডের পর বিষয়য়টি প্রকাশ্যে এলেও তারপর সেটা ধামাচাপা পড়ে যায় বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “যে সমস্ত বহুতলে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই তাদের সময়সীমা দেওয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে যদি ব্যবস্থা না করে নেয় সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বব্যস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে দমকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিছু বহুতলে দমকল নোটিশ করার পরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে খবর পেয়েছি। এবারে তাদের ছাড়া হবে না।” দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ির হাসমি চক সংলগ্ন একটি দশতলা বাড়িতে কোনওরকম অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। সেখানে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন। সেখানে আগুন লাগলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। দমকল কর্তৃপক্ষের তরফে কয়েক দফায় ওই বহুতল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ জারি করলেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ ছাড়াও শিলিগুড়ি দমকল কেন্দ্রের ঠিক পেছনেই একটি বহুতল গড়ে উঠেছে, যেখানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা তৈরি করা হয়নি। দমকল কেন্দ্রের এক কর্তা বলেন, “এমন ভাবে বহুতলগুলি তৈরি করা হয়েছে যে সেখানে আধুনিক মানের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা করার কোনও জায়গা রাখা হয়নি। দমকল কেন্দ্রের বিধি মেনে অগ্নিনার্বপক ব্যবস্থা করতে হলে বহুতল ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করতে হবে। সে জন্যই বহুতল কর্তৃপক্ষ নোটিশ পাওয়ার পর কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না। এই অবস্থায় আইনের পথে যাওয়া ছাড়া কোনও পথ নেই।” বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি জলাধার, একটি পাম্প তৈরির মতো জায়গা রাখা জরুরি। এ ছাড়াও আটোমেটিক সিস্টেমে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিতে হয়। প্রথমত, জলাধারের জায়গা না রেখেই বহুতল তৈরি করা হয়। ফলে পরের ব্যবস্থাগুলিও গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি শিলিগুড়ি শহরে সর্বত্র যথেষ্ট পরিমান জলের ব্যবস্থা না থাকায় এক জায়গায় আগুন লাগলে সমস্যায় পড়তে হয় দমকল কর্মীদের। ইঞ্জিনের জলের উপরেই নির্ভর করতে হয় তাঁদের। শিলিগুড়ি পুরসভার তরফে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। |