তালিকায় ভ্রান্তি। তাই দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুই ব্লকে আটকে গিয়েছে আয়লায় ঘরবাড়ি হারানো মানুষদের জন্য রাজ্য সরকারের ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পের কাজ।
২০০৯ সালে আয়লায় গৃহহীনদের জন্য সেই সময় ইন্দিরা আবাস যোজনা ছাড়াও ‘আমরা বাড়ি’ প্রকল্প চালু করা হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফে। উদ্দেশ্য ছিল আয়লায় যাঁরা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাঁদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার সুন্দরবন এলাকার মথুরাপুর-১ ও ২ ব্লকেও আয়লার পরে ওই দুই প্রকল্পের উপরে জোর দেওয়া হয়। কিন্তু বিপিএল তালিকাভুক্তদের জন্য ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পে ওই এলাকায় বহু বাড়িই এখনও তৈরি হয়নি। ফলে আজও আয়লায় ঘরবাড়ি হারানো অনেকেরই আশ্রয় খোলা আকাশের নীচে এক টুকরো পলিথিন। কেউ কেউ এখনও রয়েছেন কোনও ক্লাবঘরে বা বিদ্যালয়ে।
কেন আয়লায় ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলির জন্য আজও ঘরের ব্যবস্থা করা গেল না?
ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “আমার বাড়ি’ প্রকল্পে গৃহহীনদের যে তালিকা তৈরি হয়েছিল তাতে ত্রুটি থাকায় প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সঠিক তালিকা তৈরির বিষয়ে বিডিওদের খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।” |
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আয়লা-আক্রান্ত গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার ২০১০ সালে সুন্দরবন পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম দফতরের মাধ্যমে এই দুই ব্লকের প্রতিটি পরিবারের জন্য ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা অনুমোদন করে। মথুরাপুর-১ ব্লকে রয়েছে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েতগুলিতে আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সংখ্যা ৫৩৬টি। ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পে বাড়ি তৈরি হয়েছে ৭২টি। অর্ধনির্মিত ঘরের সংখ্যা ২৩৬টি। অন্যদিকে মথুরাপুর-২ ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ৮০৩টি। এর মধ্যে ৯০টি বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। অর্ধনির্মিত অবস্থায় রয়েছে ৩০০-রও বেশি বাড়ি। বাকিগুলির জন্য এখনও কোনও কাজই শুরু হয়নি।
মথুরাপুর-১ ব্লকের লালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রানাঘাট পূর্ব বিজয় কলোনি গ্রামে আয়লায় ভেঙে পড়েছিল বেশ কিছু ঘরবাড়ি। ভেঙে পড়া বাড়িগুলির মধ্যে সাতটি ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পে অনুমোদন পায়। তার মধ্যে দু’টি বাড়ির কাজ শেষ হলেও বাকিগুলি অর্ধনির্মিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওই সব পরিবারের সদস্য আজও দিন কাটছে স্কুলের বারান্দায়, ক্লাবঘরে। এই গ্রামেরই বাসিন্দা বৃদ্ধা শান্তি সর্দারের ঘর ভেঙে গিয়েছিল আয়লায়। ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পে তাঁর ঘর তৈরির জন্য ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা অনুমোদন হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ছেলে, বঊমা, নাতি-নাতনি নিয়ে কাছেই একটি আইসিডিএস কেন্দ্রে দিন কাটানো শান্তিদেবী বলেন, “প্রথমে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকায় কিছু ইট কিনে বাড়ির ভিত দেওয়ার কাজ শুরু করি। কিন্তু তার পর আর কোনও টাকাই পাইনি। তাই কাজও এগোয়নি। টাকার জন্য পঞ্চায়েত থেকে বিডিও সব জায়গায় দরবার করেছি। কেউই কিছু করেনি।” |
এ বিষয়ে মথুরাপুর-১ এর বিডিও দীপ্তার্ক বসু বলেন, “ঠিকাদারের গাফিলতিতে কিছু বাড়ির কাজ শেষ করা যায়নি। তা ছাড়া ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার নিধার্রণের ক্ষেত্রেও কিছু ত্রুটি ছিল। সেই কারণে টাকার অনুমোদন বন্ধ হয়ে যায়। আটকে যায় প্রকল্পের কাজ।
মথুরাপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংসমোহন কয়াল বলেন, “পাকাবাড়ি থাকা সত্ত্বেও বা ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন এমন সব পরিবারের নামও ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় উঠেছিল। ফলে প্রকল্পের কাজ হয়ে যায়। জেলা প্রশাসনকেও সমস্যার কথা বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে।’’ |