আমরি হাসপাতালের আঁচ লাগল সীমান্তবর্তী তেহট্ট মহকুমাতেও। কলকাতার বেসরকারি ওই হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের পর নড়েচড়ে বসল দমকল ও মহকুমা প্রশাসন। শনিবার সকাল থেকেই করিমপুরের বেশ কিছু স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও নার্সিংহোম পরিদর্শন করেন করিমপুর দমকলের কর্মীরা। দমকলসূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার সর্বত্রই এই পরিদর্শন চলবে। বেসরকারি নার্সিংহোম ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও দেখা হবে দমকল দফতরের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা আছে কি না। আগুন যাতে না লাগে বা লাগলেও সঙ্গে সঙ্গে কী করা উচিত সে ব্যাপারেও স্কুল, কলেজ ও হাসপাতালগুলোকেও সতর্ক করা হচ্ছে। করিমপুর দমকলের ওসি সুখেন সরকার বলেন, ‘‘বেশিরভাগ জায়গাতেই অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নেই। এমনকী কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ দমকল দফতরের ফোন নম্বরটা পর্যন্ত জানেন না। স্থানীয় একটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ দমকল দফতরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি। আমরা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠাব।’’
তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতিটি স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দমকলের ফোন নম্বর লিখে রাখা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান দমকল দফতরের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ ছাড়াই কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বা যাঁরা বেআইনিভাবে গ্যাস রিফিলিং করে তাদের বিরুদ্ধেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি বিভিন্ন স্তরের লোকজনকে নিয়ে মহকুমাস্তরে একটি কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটিকেও এই বিষয়ে বেশ কিছু দায়িত্ব দেওয়া হবে।’’ |
তবে দমকল দফতর ও মহকুমা প্রশাসনের এই ‘অতি তৎপরতা’কে ‘সাময়িক’ বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের কথায়, এতদিন এই তৎপরতা কোথায় ছিল? আমরির অগ্নিকান্ডের পর এইসব হইচই এখন কিছুদিন চলবে। তারপর আবার যে কে সেই! সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বেআইনিভাবেই প্রশাসনের নাকের ডগায় রমরমিয়ে চলে গ্যাস ভরার কাজ। হোটেল, পাটের গুদাম, বাজার, বিভিন্ন দোকানপাট, সিনেমাহল কোথাও কি আদৌ কোনও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা আছে? না থাকলে প্রশাসন বা দমকল এতদিন কী করছিল?
করিমপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিধান দত্ত বলেন,‘‘ সত্যি কথা বলতে বাজারে কোথাও কোনও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। বাজারে নানা রকম দোকান, গুদাম আছে। আগুন লাগলে ভয়াবহ ঘটনা ঘটতেই পারে। ফলে এটা নিয়ে আমাদের অনেক আগেই সচেতন থাকা উচিত ছিল। আমরা দ্রুত বাজার কমিটির সদস্যদের নিয়ে একটা আলোচনায় বসব। সেই আলোচনায় এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
করিমপুরের বাথানপাড়ার এক পেট্রল পাম্পের মালিক গোপাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘দমকল দফতরের ‘নো অবজোকশন সার্টিফিকেট’ ও প্রাথমিকভাবে অগ্নিনির্বাপকের যাবতীয় ব্যবস্থা আমাদের আছে। এছাড়াও পাম্পের প্রায় সর্বত্রই পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা আছে তাছাড়া পাম্প থেকে সামান্য দূরেই রয়েছে করিমপুর দমকল থাকায় আমরা অনেকটাই চিন্তামুক্ত থাকি।’’ কিন্তু কখনও কোনও পেট্রল পাম্পে আগুন লাগলে সেই আগুন নেভানোর পরিকাঠামো দমকলের আছে তো? করিমপুর দমকলের ওসি সুখেন সরকারের স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, ‘‘না। কারণ একটা পেট্রোল পাম্পে আগুন লাগলে সেই আগুন নেভানোর জন্য যে পরিমাণ ফোম দরকার হয় তা আমাদের দমকল কেন দশটা দমকলের ফোম একত্র করলেও হবে না। সেই সময় আশপাশের এলাকা জল দিয়ে ভেজানো ছাড়া কার্যত আমাদের কিছুই করার নেই।’’ তাই নিয়ম না মানাটাই যেখানে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানেও সমস্যা ও সমাধানের মাঝে থেকে যায় কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্নচিহ্ন যার কোন সদুত্তর মেলে না। |