অরক্ষিত গঙ্গা পাড় ঘেরার উদ্যোগ
হাজারদুয়ারি লাগোয়া গঙ্গায় কলকাতার এক পরিবারের ৩ পর্যটক গাড়ি-সহ তলিয়ে যাওয়ার পরে হুঁশ ফিরল সরকারি কর্তাদের। ওই জায়গাতেই গঙ্গার পাড়ে ঢাল বেয়ে নদীতে তলিয়ে গিয়েছে গাড়িটি। তারপরে এখন কেউ বলছেন, অরক্ষিত ওই গঙ্গার পাড়ে আর কোনও গাড়ি রাখতে দেওয়া হবে না। কেউ বলছেন, হাজারদুয়ারি লাগোয়া গঙ্গার পাড় বরাবর অরক্ষিত এলাকা আপাতত বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে। কেউ আবার পর্যটকদের গাড়ি ও ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা রাখার জন্য জায়গা খুঁজতে শুরু করেছেন। আর হাজারদুয়ারি প্রাসাদ ও মিউজিয়ামের পুরাতত্ত্ববিদ গৌতম হালদার বলেন, “পর্যটকদের গাড়ি রাখা ছাড়াও হাজারদুয়ারির পথ আটকে হকারদের দোকান ঘর করা-সহ বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে বহুবার বলেও কোনও সুরাহা হয়নি। এখন যদি হয় তো ভাল।”
দক্ষিণ দরওয়াজা থেকে উত্তরে ইমামবাড়া পর্যন্ত ভাগীরথীর পাড় বরাবর দৈর্ঘ্য প্রায় আধ কিলোমিটার। ওই নদীপাড়ের পূর্বদিকে আধ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে নবাবি আমলের ঐতিহাসিক দক্ষিণ দরওয়াজা, ঘণ্টাঘর, সাদা মসজিদ, নিউ প্যালেস, হাজারদুয়ারি, হলুদ মসজিদ, মদিনা, ইমামবাড়া ও কেল্লা নিজামত। ওই আধ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দক্ষিণ প্রান্তে সাদা মসজিদ লাগোয়া প্রায় দেড়শো মিটার ও উত্তর দিকে ইমামবাড়া লাগোয়া প্রায় দেড়শো মিটার এলাকায় নদীর দিকে কোনও পাঁচিল বা রেলিং দেওয়া নেই। বাকি মাঝের অংশটিতে নবাবি আমল থেকেই ইট দিয়ে তৈরি বুক সমান উঁচু রেলিং রয়েছে। মুর্শিদাবাদ (লালবাগ) সিটি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য পর্যটন সংক্রান্ত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘মুর্শিদাবাদ পর্যটন কেন্দ্র’-এরও সম্পাদক। তিনি বলেন, “ওই রেলিং এক সময় ভেঙে গেলে অনেক বছর আগে রাজ্য পর্যটন দফতর নতুন করে গড়ে দেয়। কিন্তু তার দু’প্রান্তে অরক্ষিত মোট প্রায় ৩০০ মিটার এলাকায় কেউ কখনও পাঁচিল বা রেলিং করে দেয়নি।”
অথচ নদীর দিকে ঢাল থাকা ওই এলাকাতেই পর্যটকদের গাড়ি রাখা হয়। স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “নদীর পাড় বরাবর সরু এক ফালি ওই জায়গার মালিক মুর্শিদাবাদ এস্টেট। অরক্ষিত ওই জায়গায় পর্যটকদের গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করেছে মুর্শিদাবাদ এস্টেট। তার জন্য পর্যটকদের কাছ থেকে গাড়ি প্রতি ৩০ টাকা করে মুর্শিদাবাদ এস্টেট আদায় করে। অথচ পর্যটন শিল্প ও পর্যটকদের স্বার্থে কানাকড়িও খরচ করে না তাঁরা। এ ভাবে যত্রতত্র গাড়ি রাখার বিরুদ্ধে ও পর্যটকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সব দফতরে বহু অভিযোগ করা হয়েছে। জমা দেওয়া হয়েছে স্মারকলিপি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।” উত্তর কলকাতার বটতলা থানা এলাকার উমেশচন্দ্র দত্ত লেনের জয়দেব মজুমদার, তাঁর স্ত্রী রূপাদেবী ও তের বছরের ছেলে দেবরাজ গত শনিবার দুপুরে গাড়ি-সহ হাজারদুয়ারি লাগোয়া ভাগীরথীর জলে তলিয়ে যাওয়ার পর অবশ্য সবার টনক নড়েছে।
শুক্রবারের ঘটনার দায় ঝেড়ে ফেলার পর মুর্শিদাবাদ এস্টেট ম্যানেজার শাদ আলম বলেন, “ওই নদীর পাড় বরাবর এলাকাটিতে পাঁচিল দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। কিন্তু ওই পরিকল্পনা নানা কারণে এখনও কার্যকর করা যায়নি। তবে এর পর থেকে ওই এলাকায় কোনও গাড়ি রাখতে দেওয়া হবে না।” মুর্শিদাবাদ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার বলেন, “পুরসভার পক্ষ থেকে নদীপাড়ের ওই জায়গাটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে বলে পুরপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই জায়গার বদলে পর্যটকদের গাড়ি রাখা হবে ইমামবাড়ার উত্তরে নবাব বাহাদুর ইন্সটিটিউশনের মাঠে।” মুর্শিদাবাদের পুরপ্রধান সৌমেন দাস বলেন, “নবাব বাহাদুর ইন্সটিটিউশানের প্রধানশিক্ষকের অনুমতি নিয়ে আপাতত তাঁদের মাঠটি ব্যবহার করা হবে। কিন্তু তাতে স্থায়ী সমাধান হবে না।”
স্থায়ী সমাধানের জন্য জমি চাই। পুরপ্রধান বলেন, “লালবাগ কলেজের সামনে মুর্শিদাবাদ এস্টেটের ও এনিমি প্রপার্টির অনেক জমি রয়েছে। মুর্শিদাবাদ এস্টেটের কাছে ওই সব জমি চাওয়া হয়েছে। জমি পেলে সেখানে পর্যটকদের গাড়ি রাখার জন্য ও ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা রাখার স্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে। দক্ষিণ দরওয়াজা থেকে উত্তরে ইমামবাড়া পর্যন্ত ভাগীরথীর পাড় বরাবর প্রায় আধ কিলোমিটার দীর্ঘ সরু এক ফালি জমির মালিক মুর্শিদাবাদ এস্টেট। সৌর্ন্দযায়নের জন্যে এস্টেটের কাছে নদীর পাড় বরাবর ওই জায়গা টুকুও চেয়েছি। জমি দিলেই কাজ শুরু করা হবে। হকার্স কর্নারও গড়া হবে। হাজারদুয়ারি চত্বর জবরদখল করে গড়ে ওঠা দোকান ঘর উচ্ছেদ করে হকারদের সেখানে পুনর্বাসন দেওয়া হবে।”
অতঃপর প্রশ্ন, ওই স্বপ্ন সত্যি হবে কবে?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.