জয়দেবের দেহ উদ্ধার, শ্রেয়া জানে ‘বাপি’ হাসপাতালে
মা, দাদাকে নিয়ে ঝুপ করে গঙ্গায় তলিয়ে গেল গাড়ি। তাদের বাঁচাতে গিয়ে তলিয়ে গেলেন ‘বাপি’, বাবা জয়দেব মজুমদারও (৩৭)। মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারির কাছে শনিবার ওই দুর্ঘটনার এই ছবিটা মনে আছে বছর ছয়েকের শ্রেয়ার। তার পর থেকে সে জানে, তার বাবা, মা ও দাদাকে গঙ্গা থেকে তুলে ‘হাসপাতালে ভর্তি করানো’ হয়েছে। বাচ্চাটার কাছে তার কাকা-জেঠারা যে খবরটা ভাঙতে পারেননি সেটা হল--রবিবার সকালে জয়দেববাবুর দেহ পাওয়া গিয়েছে। ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালিয়েও খোঁজ মেলেনি শ্রেয়ার মা রূপাদেবী ও দাদা সপ্তম শ্রেণির ছাত্র দেবরাজের।
তখন থানায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
দুর্ঘটনার পরের ক’টা মুহূর্ত কথাই বলতে পারেনি শ্রেয়া। গঙ্গার পাড়ের একটি সাইকেল গ্যারাজের মালিক বিশ্বজিৎ বিশ্বাস যখন তাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন তখন ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে কথা বলার চেষ্টা করছিল প্রথম শ্রেণির ছাত্রীটি। বিশ্বজিৎবাবু শ্রেয়াকে তুলে দেন পুলিশের হাতে। লালবাগ থানায় শ্রেয়াই পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়। নিজেদের ঠিকানাও ঠিকঠাক জানিয়েছিল। মুর্শিদাবাদ থানায় ‘ডিউটি অফিসার’-এর ঘরে তাকে তখন ঘিরে ছিলেন কয়েকজন মহিলা পুলিশকর্মী। তার কাছ থেকেই কলকাতার বাড়ির ফোন নম্বর পায় পুলিশ। থানার ফোন থেকে বাড়িতে ফোন করেছিল শ্রেয়া। বারবার কান্নায় কথা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। থানার পুলিশকর্মীদের দেওয়া চকোলেট সে তখন ছুঁয়েও দেখেনি। শনিবার রাত ১০টা নাগাদ লালবাগে পৌঁছন উত্তর কলকাতার উমেশচন্দ্র দত্ত লেনের বাসিন্দা জয়দেববাবুর দাদা শিবশঙ্করবাবু ও ভাই সুজয়বাবু। তাঁরাই শ্রেয়াকে থানা থেকে নিজেদের কাছে নিয়ে যান। তাঁদের কাছে পেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয় শ্রেয়া। রাতে সে জেঠা-কাকার কাছে ঘুমিয়েছে। তবে এ দিন মাঝে মাঝেই সে জেদ ধরছে, “আমাকে বাপির কাছে নিয়ে চল জেঠু। মাকে দেখব। হাসপাতালে দাদার কাছে নিয়ে চল!” শিবশঙ্করবাবু তখন বলছেন, “তুমি তো ছোট্ট। তাই তোমাকে হাসপাতালে ঢুকতে দেবে না।” শ্রেয়া অন্য দিকে ফিরতে ধরা গলায় শিবশঙ্করবাবু বলেন, “আপাতত সামলেছি। কিন্তু কত ক্ষণ!” সুজয়বাবু বললেন, “বাবা, মা, দাদার সঙ্গে আবার দেখা হবে ভেবেই ও ঠিক আছে। অন্য কিছু বলব কী করে!”
গঙ্গায় ডুবুরি নামিয়ে সন্ধান। রবিবার লালবাগে ছবিটি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক।
শুক্রবার পুলিশ অনুমান করেছিল, গাড়ির সঙ্গে জলে পড়েছেন চালকও। এ দিন শ্রেয়ার কথা থেকে মিলেছে অন্য সূত্র। শ্রেয়া বলে, “মা, দাদা আর বাপিকে নিয়ে গাড়িটা ডুবে যেতেই ড্রাইভারকাকু আমাকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে পালাল।” সুজয়বাবুও জানান, গাড়ির মালিক সঞ্জীব মাইতি ওরফে সপ্তমী নিজেই চালক। বাড়ি মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার ভালকুন্দি গ্রামে। তাঁর দাবি, “শনিবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ মোবাইলে ফোন করায় সঞ্জীব ফোনটা ধরেছিল। বলল এক মাঝি না কি ওকে বাঁচিয়েছে! আমাদের ধারণা, দুর্ঘটনার দায়ে পড়তে পারে ভেবে ও লুকিয়ে রয়েছে।” মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার বলেন, “আত্মগোপন করে থাকলেও গাড়ির চালককে ধরা হবেই।” তিনি জানান, দেবরাজ ও রূপাদেবীর খোঁজে এ দিন বিকেল পর্যন্ত কলকাতা ও বহরমপুরের জনা কুড়ি ডুবুরি গঙ্গায় তল্লাশি চালিয়েছেন। তল্লাশি চলবে আজ, সোমবারেও। ‘ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক জয়দেববাবুর বেশ কয়েকজন প্রতিবেশীও এ দিন সকালে কলকাতা থেকে লালবাগে এসেছেন। তাঁদের সঙ্গেই পুরসভার ‘নেতাজি আবাস’-এ রয়েছে শ্রেয়া। তাঁদের হাত ধরে সে এ দিন লালবাগে ঘুরতেও বেরিয়েছিল। দুপুরে কী খেয়েছ? জবাব দিল, “মাছ-ভাত।” তার পরেই টলটলে জল ভরা দু’চোখে বলল, “আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে? বাপিকে দেখব!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.