পুলিশ এসি-১ (পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী)
মোহনবাগান-০ |
কোচ হিসাবে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও বড় সাফল্য নেই। বলা যায় নিতান্তই শিক্ষার্থী তিনি শিশির ঘোষ। অন্য জন কোচ হিসাবে দেশের সব ক’টা ট্রফি জেতার স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন অনেক আগে সুব্রত ভট্টাচার্য।
রবিবাসরীয় বিকেলে ‘শিক্ষার্থী’র কাছেই শেষ পর্যন্ত নতজানু হয়ে মাঠ ছাড়তে হল ‘মাস্টার’কে। স্ট্রাইকার হিসাবে সুব্রতকে টপকে শিশির গোল করেছেন কি না চট করে মনে পড়ে না। টিম-বস হিসাবে কিন্তু টপকে গেলেন প্রাক্তন জাঁদরেল স্টপারকে।
আই লিগ থেকে নীচের দিকে নামতে শুরু করেছে মোহনবাগান। কলকাতা লিগ যদি পাওয়া যায়, এই আশায় সবুজ-মেরুন জনতা ভিড় করছেন নিজেদের মাঠে। এ দিনের পর কিন্তু প্রশ্ন উঠে গেল, এ বারও কি ট্রফিহীন থেকে যাবে মোহনবাগান? সেই হতাশা থেকেই ম্যাচের পর ক্লাব তাঁবুতে বিক্ষোভ দেখালেন সমর্থকরা। পরিস্থিতি সামলাতে মাঠে নামতে হয় স্বয়ং ক্লাব প্রেসিডেন্ট টুটু বসুকে। লিগ টেবিলের সবচেয়ে নীচের দলের কাছেও তেরো কোটির টিমের হার যে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সমর্থকেরা! |
লিগে প্রথম পয়েন্ট, তাও আবার মোহনবাগানকে হারিয়ে পুরো তিন পয়েন্ট। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের স্রোতে ভেসে গেলেন পুলিশের মাধব দাস-অনীত ঘোষরা। পুলিশের একটা গোলে ‘লাঠিচার্জ’ আর ‘শান্তিস্থাপন’ দু’টোই হয়ে গেল। মোহনবাগানকে হারিয়ে ইস্টবেঙ্গলের মুখে হাসি ফোটাল শিশিরের দল। অর্থাৎ স্থানীয় লিগে সুব্রতর মুখোমুখি হওয়ার আগেই ‘অ্যাডভান্টেজ’ মর্গ্যান। স্টিভ ডার্বি ‘এপিসোড’-এর পর সুব্রতর ছোঁয়ায় মোহনবাগানে আলো ঢুকতে শুরু করেছিল। এসেছিল অকাল বসন্ত। কিন্তু হঠাৎ-ই যেন তাল কেটে গিয়েছে। টানা তিন ম্যাচে জয় আসেনি! হঠাৎ কী হল বাবলুর বাগানে?
দেখে মনে হল রোগ অনেক। একটা দল দিনের পর দিন অ্যানিমিয়ায় ভুগতে ভুগতে এগোবে। এগোবে ওডাফা-ব্যারেটো নামের লাইফলাইনে। কখনও একটা চকিত শট, কখনও বা একটা দুর্দান্ত ভলিতে চোখ-ধাঁধানো গোল। কিন্তু যে দিন আটকে যাবেন বিদেশিরা? যে দিন ‘ভাগ্য’ নামের জিনিসটা যথেষ্ট মাত্রায় পাশে পাবেন না ব্যা-ও জুটি, সে দিন? সে দিন পুলিশের ব্যারিকেডে এ ভাবেই হুমড়ি খাবে মোহনবাগান। পার্থপ্রতিম চক্রবর্তীর কোনও পাল্টা জবাব থাকবে না সুব্রত ভট্টাচার্যের হাতে। প্রতিপক্ষ কোচ হলেও প্রিয় দলের হতশ্রী অবস্থা দেখে শিশিরও বলে ফেললেন, “অ্যালেক্স ফার্গুসন এলেও জেতাতে পারবে না মোহনবাগানকে। বাবলুদা কী করবে?” |
পুলিশের জালে আটক ব্যারেটো। |
সত্যিই তো। দলের ফাঁক-ফোঁকর বাড়তে বাড়তে এমন একটা জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে, এখন সবের মধ্যেই খুঁত ধরা পড়ছে। মাঝমাঠ আর রক্ষণের দুর্দশা তো বটেই, এ বার চোখ টানছে ফরোয়ার্ডের বড় বড় গর্ত। ম্যাচ শুরুর দু’ঘণ্টা আগে যে দলের প্রধান স্ট্রাইকার চোটের অজুহাত দেখিয়ে সরে যাচ্ছেন, সেই দলের উন্নতি হবে কী করে? অদ্ভুত ব্যাপার হল, পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে সেই ওডাফাকেই বিরতির পর নামালেন সুব্রত। মোহন-কোচ প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করলেন, “সকালে ওডাফা নিজেই বলে, ওর পায়ে লাগছে। তাই রিজার্ভে রেখেছিলাম। পিছিয়ে পড়ার পর ওকে নামাতেই হল।”
ওডাফা নেমেও কোনও বিস্ফোরণ ঘটাতে পারলেন না। মাধব তাঁর গায়ে এমন সেঁটে রইলেন, বল ধরা তো দূরের কথা, নড়াচড়া করতে পারেননি মোহন-সুপারস্টার। দু’কোটির ফুটবলারের যদি পুলিশের বিরুদ্ধেও কালঘাম ছুটে যায়, তা হলে তাঁর পিছনে অযথা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করার কোনও মানে হয় কি? ব্যারেটো যাও বা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেন, সেটাও জলে চলে গেল সতীর্থদের অজস্র মিস পাস আর উদ্দেশ্যহীন ফুটবলে। পার্থর গোলেও প্রদীপ আর আনোয়ারের ব্যর্থতা বেশি। টালিগঞ্জে শান্তিপুরের বাসিন্দা দু’জনের ফাঁক দিকে এমন করে গলে বেরোলেন, যেখান দিয়ে হয়তো মাছি গলার উপায় নেই। গোলকিপার শিল্টনের কিছু করার ছিল না।
সুব্রত হাপিত্যেশ করে বসে আছেন সুনীল-নবি-জুয়েলের ফেরার অপেক্ষায়। জাতীয় ফুটবলাররা আসতে আসতে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ শব্দটাই না ধুলোয় মিশে যায়! |
মোহনবাগান: শিল্টন, ড্যানিয়েল (কিংশুক), আনোয়ার, ধনরাজন, জাগতার (মণীশ), প্রদীপ, স্নেহাশিস, অভিনাশ, রাকেশ, বুঁগো (ওডাফা), ব্যারেটো। |