খেলল রিয়াল, জিতল বার্সা
রিয়াল মাদ্রিদ-১ (বেঞ্জিমা)
বার্সেলোনা-৩ (সাঞ্চেস, মার্সেলো-নিজগোল, ফাব্রেগাস)
নিবার রাত জেগে ‘এল ক্লাসিকো’ দেখার সময় আমার কয়েক দিন আগের আই লিগে ডার্বি-র কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল। ওই ম্যাচটায় মোহনবাগান পেনাল্টি গোলে জিতেছিল, আর মাঠ জুড়ে খেলেছিল ইস্টবেঙ্গল। লা লিগা-র এই হাই ভোল্টেজ ম্যাচটায় খেলল রিয়াল, জিতল বার্সা। আমার মতে সব সুযোগগুলো ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচটার ফল উল্টোটাই হত।
রিয়াল মাদ্রিদ ম্যানেজার মোরিনহো ম্যাচের আগে শুনলাম বলছেন, তাঁর টিমটা এখনও তৈরি নয়। মাঠে কিন্তু মনে হল উল্টো। আক্রমণ তুলে আনা, রক্ষণ সংগঠন, মাঝমাঠে দাপট, তিন-চার-পাঁচ জনের মুভ রিয়াল সত্যিই আমার মন ভরিয়ে দিয়েছে। তবুও ঘরের মাঠ বের্নাবৌ-তে রিয়াল জিততে পারল না সহজ সুযোগগুলো নষ্ট করার খেসারত দিয়ে। স্প্যানিশ লিদের ইতিহাসে দ্রুততম গোলটা করেছিল বেঞ্জিমা। ম্যাচ শুরুর একুশ সেকেন্ডের মধ্যে। বার্সা গোলকিপার ভালদেসের ভুলে। এ রকম ১-০ এগিয়ে থাকার সময় রোনাল্ডো যে গোলটা নষ্ট করল সেটা আবার অবিশ্বাস্য। কলকাতা লিগের ম্যাচে এ রকম হয়-টয়। কিন্তু লা লিগায়! সহজ সুযোগটা রোনাল্ডো নষ্ট না করলে খেলা হয়তো ওখানেই শেষ হয়ে যায়। জিতেও হয়তো যেত রিয়াল।
ফাব্রেগাসকে নিয়ে মেসি, বুস্কেতসদের উচ্ছ্বাস। ছবি: রয়টার্স
মোরিনহো বনাম গুয়ার্দিওয়ালা যুদ্ধে চতুরতা, বুদ্ধি, স্ট্র্যাটেজি, ফুটবল অঙ্ক এগুলো তো দেখতে চাইছিলামই। ফুটবল বিশ্ব যে যুদ্ধ দেখার অপেক্ষায় ছিল, সেই মেসি বনাম রোনাল্ডোর যুদ্ধের পরিণতি কী হয়, সেটা দেখার ইচ্ছেও ছিল। আরও আগ্রহ ছিল এ জন্যই যে, দু’জনেই এই ধুন্ধুমার ম্যাচের আগে ১৭টা গোল করে ফেলেছিল এই টুর্নামেন্টে। নব্বই মিনিট দু’জনকে দেখার পর লিখতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই, আমার ভোট কিন্তু যাবে মেসির দিকেই। কারণ দুটো। এক) বিরতির আগে পিছিয়ে পড়া অবস্থায় বার্সার ১-১ করার গোলের পাস। তিন জনের মাঝখান দিয়ে মেসি বলটা যে ভাবে সাঞ্চেসের কাছে পাঠাল তার চেয়ে ভাল পাস হয় না। টিভির সামনে বসেও অজান্তে হাততালি দিয়ে ফেলেছিলাম। মহাতারকা সে-ই, যে এ ভাবে জ্বলে উঠে দলকে ম্যাচে ফেরায়।
দুই) নিজে গোল করতে না পারলেও মেসি কিন্তু তার নিজের খেলাটাই খেলেছে। যে দুটোর কোনওটাই উল্টো দিকে পারেনি রোনাল্ডো।
মেসির প্রধান অস্ত্র বল কন্ট্রোল, দুর্দান্ত থ্রু-পাস আর মাঠের ডান দিক এবং বাঁ দিকে সমান ভাবে খেলার দুর্দান্ত ক্ষমতা। উল্টো দিকে রোনাল্ডোর অস্ত্র বিপক্ষের ডিফেন্সের উপর ঝঁপিয়ে পড়ার ক্ষমতা, হেডিং এবং উইং দিয়ে পাস খেলে দ্রুত গোলমুখে ঢুকে পড়া। দেখলাম রিয়ালের এই সেরা সময়ে রোনাল্ডো নিজের সেই খেলাটা খেলতেই পারল না।
বার্সা যে গোলে ২-১ করল, সেটা আন্তর্জাতিক ফুটবলের সব সরকারি সাইটে আত্মঘাতী দেখানো হচ্ছে। মার্সেলোর আত্মঘাতী গোল। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, ওটা জাভিরই গোল। পঁচিশ গজ দূর থেকে জাভি যে শটটা নিয়েছিল সেটা ব্লক করতে গিয়েছিল মার্সেলো। ওর পায়ে লেগে বলটা দিক পাল্টে রিয়ালের গোলে ঢোকে। আত্মঘাতী কী ভাবে হয়? আর খেলার গতির বিরুদ্ধে ফাব্রেগাসের গোলটাকে আমি বার্সেলোনার টিম-এফর্ট বলব। ম্যাচের চারটে গোলের মধ্যে সেরাও ওটাই। ডান দিক দিয়ে মেসি বলটা নিয়ে অনেকটা ঢুকে এসে দারুণ ভাবে আলভেসকে দিয়েছিল। আলভেসও নিখুঁত ক্রসটা রাখল এত ভাল যে, ফাব্রেগাসের গোলটা না করাই ছিল অপরাধ। রোনাল্ডোর মতো ‘অপরাধ’ করেনি ফাব্রেগাস।
মেসিদের টিমে ছিল জাভি, ইনিয়েস্তা, পুওল, পিকেরা। তা সত্ত্বেও তারা কেন মন ভরাতে পারল না! ছড়িয়ে দিতে পারল না ফুটবলের সুগন্ধী। গুয়ার্দিওয়ালার টিমটাকে দেখে মনে হচ্ছিল, লিগ টেবিলে পিছিয়ে পড়ে, তারা জেতার জন্য মরিয়া ছিল। সুন্দর ফুটবল নয়, ওরা চাইছিল শুধুই তিন পয়েন্ট। বার্সাকে চাপে ফেলে দিয়েছিল হয়তো লা লিগায় ওদের অ্যাওয়ে ম্যাচের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। শেষ ১০ ম্যাচে মাত্র তিনটেতে জয়। গুয়ার্দিওলা নিজের লক্ষ্যে পুরোপুরি সফল। আর ঘরের মাঠে বার্সার বিরুদ্ধে রিয়ালের ব্যর্থতাও বহাল থাকল। ড্র করলেই পাঁচ পয়েন্টে এগিয়ে যাব, দি’মারিয়া, সের্খিও রামোসদের এই ভাবনাটাই বোধহয় কাল হল।
আমরা সাধারণত এ রকম ম্যাচ দেখতে রাত জেগে অপেক্ষা করে থাকি দৃষ্টিনন্দন ফুটবল দেখব বলে। ফুটবল-শিল্প দেখব বলে। সে সব কিন্তু এই মহাম্যাচে দেখতে পাইনি। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ সাধারণত খুব একটা উঁচু মানের হয় না। সম্ভবত দু’দলের উপর তীব্র চাপ থাকে বলে টেনশনে আক্রান্ত থাকে সবাই। আমিও থাকতাম। দেখলাম মেসি-রোনাল্ডোরাও এর ব্যতিক্রম নয়!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.