অতি বিষাক্ত কীটনাশক এন্ডোসালফান পেটে গিয়েই করলা নদীতে হাজার হাজার মাছের মৃত্যু হয়। এর আগে, নদীর জলের নমুনা পরীক্ষা করে এন্ডোসালফান-সহ সাত রকমের কীটনাশক মিশে থাকার প্রমাণ পেয়েছিল দূষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদ। এ বার মৃত মাছের নমুনা পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, জলে মিশে থাকা অন্যান্য কীটনাশক নয়, এন্ডোসালফানই জলপাইগুড়ির করলা নদীতে মাছের মৃত্যুর কারণ। রবিবার রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সুত্রে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রশাসনের কাছেও এ বিষয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। অতিমাত্রায় বিষ থাকায় এন্ডোসালফান কীটনাশকের ব্যবহার ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মাছের পেটে এই বিষ থাকায়, মৃত মাছ খেলে মানুষের শরীরেও সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। নদীতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ সাধারণত অন্যান্য ছোট মাছ খেয়ে থাকে, নদীতে মৃত মাছের দেহও খুবলে খায় বেশ কিছু বড় মাছ। সে কারণে করলা নদীতে বিষক্রিয়ায় মৃত মাছ খেয়ে অন্যান্য মাছের মধ্যেও বিষক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান তথা মাছ বিশেষজ্ঞ সুদীপ বরাট বলেন, “এন্ডোসালফানে মৃত মাছ খেয়ে অন্য মাছের সংক্রমণ হতে পারে। এখনও নদীতে যে সব মাছ জীবিত রয়েছে তাদের চামড়ায় এন্ডোসালফান মিশে থাকতে পারে। সেখানেও সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তবে নদীতে বেশি মাত্রায় জল দিয়ে বিষের প্রভাব কেটে গেলে সমস্যা থাকবে না।” চিকিৎসক বরুণ বিশ্বাস বলেন, “এন্ডোসালফান খেয়ে মৃত মাছ খেলে মানুষের পেটে সংক্রমণ হতে পারে। লিভারে সংক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে।” রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত বলেন, “মৃত মাছ পরীক্ষা করে বেশি মাত্রায় এন্ডোসালফান পাওয়া গিয়েছে। অন্যান্য কীটনাশকের কারণে মাছের মৃত্যু হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। রিপোর্ট জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” মাছের নমুনা পরীক্ষা করে অতিমাত্রায় এন্ডোসালফানের প্রমাণ পেয়ে নদী থেকে সব মৃত মাছ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। নদীর যে এলাকা জুড়ে বিষক্রিয়া হয়েছিল সেই এলাকার জীবিত বা মৃত সব ধরনের মাছ তুলে ফেলার বিষয়েও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে প্রশাসনের তরফে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কী নির্দেশ পাঠায় সে দিকে নজর রাখছে প্রশাসন। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “এন্ডোসালফান কোথায় ব্যবহার করা হয়, কোথা থেকে কিনতে পাওয়া যায় তার তদন্তের জন্য কৃষি দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে কী পদক্ষেপ করা প্রয়োজন সে বিষয়ে যে নির্দেশ পাঠানো হবে। সেগুলি দ্রুত রূপায়ণ করা হবে।” |