দেদার গাছ কাটছে চোরেরা, ক্ষোভ ইস্পাত কলোনিতে
ত কয়েক বছর ধরে ইস্পাত কলোনি এলাকায় বেআইনি ভাবে বড় বড় গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে ‘চোরাচালান চক্র’। এমনই অভিযোগ বাসিন্দাদের। পুরো গাছ একসঙ্গে সরাতে না পারলে ধাপে ধাপে গাছের ডাল কেটে ফেলে পরে গুঁড়ি সরিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না তুলনায় কমবয়েসি গাছও। অবিলম্বে এই সব দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার পরে কারখানার কর্মীদের থাকার জন্য নিজস্ব টাউনশিপ বানিয়েছিল ডিএসপি। তখন বহু পুরনো গাছ কাটা পড়ে। তবে তার পরেও রয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু। আবার কারখানার কর্মীরা নিজেদের আবাসনের চত্বরে বা আশপাশে নতুন গাছ লাগিয়েছিলেন। সেই সমস্ত গাছের বয়স চার দশকেরও বেশি। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গাছের চোরাচালান চক্র দিনের পর দিন এই সমস্ত গাছ কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে এলাকা। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মূলত শনিবার বিকাল ৫টার পর থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত এই চক্র সক্রিয় হয়। কারণ এই সময় ডিএসপি-র আধিকারিকেরা ছুটিতে থাকেন। কাজেই স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ অভিযোগ জানানোর সুযোগ পান না। পরে সোমবার অফিস খোলার পরে অভিযোগ জানিয়ে কোনও লাভ হয় না। কারণ, ততক্ষণে গাছ কাটার পালা সাঙ্গ হয়ে গিয়েছে। শাল, সেগুন, আম, কাঁঠাল, অশ্বত্থ--কিছুই চোরেদের হাত থেকে রেহাই পায় না।
—নিজস্ব চিত্র।
বি-জোনের ভারতী রোডের বাসিন্দা মনোজিৎ পাট্টাদার বলেন, “আমার বাড়ির অদূরে একটি কয়েক দশকের পুরনো কাঁঠাল গাছ সম্প্রতি কেটে ফেলা হল প্রকাশ্য দিবালোকে। তাছাড়া আরও পুরনো একটি আমগাছের মোটা শাখাগুলিও কেটে নিয়ে গেল দুষ্কৃতীরা।” তাঁর অভিযোগ, এক দল ডিএসপির কর্মী এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারাই নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে গাছ কাটার কাজ সহজ করে দেয়। গাছের কাটা অংশ নিজেরাও প্রয়োজন মতো ব্যবহার করে। এ’জোনের বাসিন্দা সুজয় ভৌমিক জানান, এই চক্র সক্রিয় এজোন এলাকাতেও। তিনি বলেন, “বিদ্যাপতি রোড এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বছর দুয়েক আগে গিয়েছিলাম। দিনের আলোয় একদল লোক এসে শতাব্দী প্রাচীন বট গাছের মোটা ডালপালা কেটে লরি বোঝাই করে নিয়ে গেল। বাসিন্দাদের আপত্তিকে পাত্তাই দিল না। পরে বাড়ি ফিরে দেখি সে দিনই আমাদের বাড়ির পাশে একটি বহু পুরনো কাঁঠাল গাছ মাটি পর্যন্ত কেটে নিয়ে চলে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা।” তিনি জানান, বড় গাছ একেবারে সরাতে না পারলে প্রথমে দুষ্কৃতীরা বড় ডালপালা কেটে নিয়ে চলে যায়। তার পরে এক দিন সুযোগ বুঝে গুঁড়ি নিয়ে চলে যায়।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শিল্পাঞ্চল হওয়ার কারণে এখানে দূষণের মাত্রা বেশি। অনেকেই দূষণ জনিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। সেখানে এভাবে গাছ কেটে ফেলায় বিপদ আরও বাড়বে বলে অভিমত তাঁদের। যত দিন যাচ্ছে এই কাঠ চোরাই চক্রের রমরমা বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা।
ডিএসপি কর্তৃপক্ষ জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য দিকে, দুর্গাপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক কুমার বিমল জানান, অনুমতি ছাড়া গাছ বা গাছের ডালপালা কাটা যায় না। তাছাড়া পুরনো গাছ কাটতে গেলে নতুন গাছ লাগাতেও হয়। তিনি বলেন, “শহর জুড়ে নজরদারি চালানোর পরিকাঠামো বন দফতরের নেই। গাছ কাটার পরে খবর আসে। তত ক্ষণে দুষ্কৃতীরা উধাও হয়ে যায়। হাতেনাতে ধরা না গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।” তিনি জানান, এই সমস্ত কাঠ সরাসরি চলে যায় বেআইনি করাতকলে। তাই বন দফতর চেষ্টা করছে যাতে ওই কলগুলি বন্ধ করে দেওয়া যায়। সম্প্রতি শিল্পাঞ্চলের বেশ কিছু এমন করাতকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। বাকিগুলির বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.