চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল ও অগস্টে মারা গিয়েছিল তিনটি পূর্ণবয়স্ক চিতল হরিণ। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় একটি রেসাস মাঙ্কি বা লালমুখো বাঁদরও মারা যায়। তালিকায় শেষ সংযোজন ছিল একটি ড্রোমেডারি ক্যামেল বা এক-কুঁজো উট। পশুদের এ হেন মৃত্যু-মিছিলের জেরে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ঝাড়গ্রামের ‘মিনি চিড়িয়াখানা’। পরিচিত নাম ‘ডিয়ার পার্ক’। ওই সময় বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছিল, প্রাণি-চিকিৎসকদের মত অনুযায়ী, বেশ কিছু পশুর মধ্যে যক্ষ্মা ধরা পড়েছিল। তাই দর্শকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ রেখে পশুদের চিকিৎসাকেই প্রাধ্যন্য দেওয়া হচ্ছে। প্রায় তিন মাস হতে চলল, এখনও বন্ধ চিড়িয়াখানা। এ দিকে শীতের মরসুমে পর্যটকদের কাছে ঝাড়গ্রামের অন্যতম আকর্ষণ এই চিড়িয়াখানা। তিন মাসেও কি চিকিৎসার কাজ ঠিকমতো হল নাউঠছে প্রশ্ন।
চিড়িয়াখানার দরজা দর্শকদের জন্য খোলা যাবে কি না, তা নিয়ে বন দফতরকে এখনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর। কারণ, প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকেরা বেশ কিছু পশুর মধ্যে ‘সম্ভাব্য যক্ষ্মা’র কথা বললেও, পরবর্তী অন্যান্য পরীক্ষায় ও বিশ্লেষণে যক্ষ্মার প্রমাণ মেলেনি। প্রাণি-চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, যে-ক’টি পশুর মৃত্যু হয়েছিলতার অন্য কারণও থাকতে পারে। তবে চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের মধ্যে এখন আর কোনও অস্বাভাবিকতা বা অসুস্থতা নেই বলেও জানিয়েছেন প্রাণি-চিকিৎসকেরা। তার পরেও চিড়িয়াখানার দরজা দর্শকদের জন্য খোলা যাবে কি না তা জানতে রাজ্যের প্রাণি-চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মত চেয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর। |
এই টানাপোড়েনে চিড়িয়াখানার দরজা খোলা নিয়ে সংশয়ে বন দফতর। কী করণীয় জানতে রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার দ্বারস্থ হয়েছে ঝাড়গ্রাম বন-বিভাগও। ঝাড়গ্রামের বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) অশোকপ্রতাপ সিংহের অবশ্য বক্তব্য, “চিড়িয়াখানাটি দর্শকদের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের উপ-অধিকর্তা বাণেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, “কলকাতা থেকে বিশেষজ্ঞরা এসে দেখার পর যা রায় দেবেন তার ভিত্তিতে আমরা বন দফতরকে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।”
অস্থিরতা ক্রমে থিতিয়ে আসায় শীতের মরসুমে ঝাড়গ্রামে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। আগামী ১১-১২ জানুয়ারি দু’দিনের ‘জঙ্গলমহল উৎসব’ও হতে চলেছে। ওই উৎসব ঘিরে ঝাড়গ্রামে ‘পর্যটকের ঢল’ নামবে বলে আশাবাদী বিভিন্ন মহল। চলতি শীত-মরসুমে চিড়িয়াখানার দরজা বন্ধ থাকলে যেমন পর্যটকেরা বঞ্চিত হবেন, তেমনই সরকারি রাজস্বেরও ক্ষতি। কারণ, ডিয়ার পার্কটি মাস তিনেক বন্ধ থাকায় চিড়িয়াখানা থেকে বন দফতরের রোজগারও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পর্যটনের মরসুমে মাসে দর্শকদের প্রবেশমূল্য বাবদ চিড়িয়াখানা থেকে গড়ে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হয় বন দফতরের। গত তিন মাসে সেই আয় বন্ধ। ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে ধবনী এলাকায় ৩৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে এই মিনি চিড়িয়াখানার বিস্তৃত এনক্লোজারে ৯৫টি চিতল হরিণ ছাড়াও রয়েছে ভালুক, হায়না, কুমির, পাইথন, ময়ূর-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। |