বেহাল পরিকাঠামোর যুক্তি
প্রাণী উদ্ধার থেকে নজরদারি, সবেতেই ‘দর্শক’ বন দফতর
নকর্মী নেই। নেই নিজস্ব গাড়িও। গাছ কাটার অভিযোগ পেলে বা বন্যপ্রাণী ধরা পড়লে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূর থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসতে হয়। অধিকাংশ সময়েই ঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেন না বন দফতরের আধিকারিকেরা। অথচ, রাজারহাট এলাকায় বাগান কেটে বাড়ি তৈরি থেকে শুরু করে বন্যপ্রাণী ধরা নিয়ে ঘন ঘন অভিযোগে জেরবার বন দফতর।
বন দফতরের উত্তর ২৪ পরগনা বারাসত রেঞ্জ অফিসের অধীনে সাতটি ব্লকের মধ্যে একটি ব্লক রাজারহাট। বারাসতের রেঞ্জ অফিসার সমীর ঘোষ বলেন, ‘‘বারাসত রেঞ্জের সাতটি ব্লকের মধ্যে রাজারহাট থেকে শুরু করে দেগঙ্গা, হাবরা সবই এই ব্লকের অধীনে। এই সাতটি ব্লক সামলানোর জন্য কর্মীর সংখ্যা মাত্র ১২। এর মধ্যে রাজারহাট ব্লকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেখানে এখন চলছে নির্মাণকাজ। সেই কাজের জন্য গাছ কাটা থেকে শুরু করে সাপ বা ভাম জাতীয় প্রাণী প্রায়শই ধরা পড়ে। শুধু এই ব্লকের জন্যই অন্তত দু’জন বনকর্মী হলে ভাল হয়। কিন্তু এক জনও নেই।” সমীরবাবু জানান, আগে রাজারহাটের বিডিও অফিসের পাশে একটি ব্লক অফিস ছিল। এক জন বনকর্মীও ছিলেন। তিনি অবসর নেওয়ার পরে এখন আর কেউ নেই।
বারাসত বন দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে রাজারহাট ব্লক থেকেই। মাস খানেক আগে রাজারহাটের বেসিনা গ্রামে একটি আমবাগানের ৮৫টি গাছ কেটে আবাসন তৈরির অভিযোগ আসে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে ওই নির্মাণ সংস্থার গোলমালও হয়। ঘটনাটি গড়ায় থানা পর্যন্ত। অভিযোগ যায় বন দফতরেও। সমীরবাবু বলেন, “এই ধরনের ঘটনা ঘটলে ভাল করে খতিয়ে দেখার জন্য অনেক কর্মী দরকার। আমরা খতিয়ে দেখেছি, ওই নির্মাণ সংস্থা নিয়ম মেনেই গাছ কেটেছে। কিন্তু গাছ কাটলে নিয়ম অনুযায়ী ফের গাছ লাগাতে হবে। বাণিজ্যিক কারণে একটি গাছ কাটলে পাঁচটি গাছ লাগানোর কথা।” তিনি আরও জানান, ওই সংস্থা দাবি করেছিল, তারা ৮৫টি গাছ কাটার বিনিময়ে পাঁচ গুণ অর্থাৎ চারশোর বেশি গাছ লাগাবে। কিন্তু আইন অনুযায়ী তারা ঠিক মতো গাছ লাগাচ্ছে কি না বা সেই সংখ্যক গাছ লাগানোর মতো জায়গা ওই নির্মীয়মাণ আবাসনে আছে কি না, তা দেখার জন্য ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। কিন্তু কর্মীর অভাবে সব সময়ে তা সম্ভব হয় না। সম্প্রতি রাজারহাটের একটি এলাকায় পর পর গাছের মৃত্যু হচ্ছিল। অভিযোগ ওঠে, বিষ প্রয়োগ করে গাছগুলিকে মেরে ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু ঠিক কী কারণে গাছগুলি মারা যাচ্ছিল, তা ভাল করে খতিয়ে দেখা দরকার। দরকার এলাকায় নিয়মিত টহলদারিও। কিন্তু সমীরবাবু জানিয়েছেন, সেখানেও অভাব সেই কর্মীরই।
শুধু গাছ কাটার অভিযোগই নয়, রাজারহাট থেকে বন্যপ্রাণী ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজারহাটে রয়েছে চন্দ্রবোড়া-সহ বেশ কিছু বিরল প্রজাতির সাপ। রয়েছে ভাম, হনুমানও। সম্প্রতি রাজারহাটের একটি গ্রাম থেকে পাইথন ধরা পড়েছিল। সমীরবাবু জানান, সাপ ধরার লোক নিয়ে বারাসত থেকে যেতে যেতে অনেক সময়েই সাপ মেরে ফেলেন গ্রামবাসীরা। আবার, হনুমানের উৎপাত হলে বহু ক্ষেত্রেই কার্যত বসে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না। কারণ, হনুমান ধরার খাঁচা কম। এ ছাড়া, বারাসত থেকে রাজারহাট যেতে হয় গাড়ি ভাড়া করে। উত্তর ২৪ পরগনার ডিএফও কৌশিক সরকার বলেন, “উত্তর ২৪ পরগনার পাঁচটি রেঞ্জে আমাদের কর্মী মাত্র ৬১জন। রাজারহাটে আলাদা কোনও পরিকাঠামো নেই। নেই বারাসত রেঞ্জের নিজস্ব গাড়ি। বারাসত থেকে রাজারহাট এতটা দূর হওয়ায় হঠাৎ কোনও অভিযোগ বা খবর এলে আমাদের পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে যায়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.