চুক্তি প্রযোজ্য ২০২০ থেকে
পরিবেশ বৈঠকে অবশেষে মিলল সমাধান
শুক্রবারেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার পরেও আরও ৩৬ ঘণ্টা লাগল কথা শেষ হতে। তবে ১৪ দিনের ম্যারাথন বৈঠক শেষে রবিবার একটা আশার আলো দেখতে পাওয়া গিয়েছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ সংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থিত ১৯৪টি দেশ অবশেষে দূষণ কমানোর লক্ষ্যে একমত হতে পেরেছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর ঘোষক হলেন আয়োজক দেশের বিদেশমন্ত্রী মাইতে নকোয়ানা মাশাবানে। তিনি আবার বৈঠকের প্রধানও।
তবে পথটা এত মসৃণ ছিল না। এক সময়ে তো মনে করা হয়েছিল এই বৈঠক বুঝি ভেস্তেই গেল। ২০১২-য় শেষ হচ্ছে প্রথম দফা ‘কিয়োটো চুক্তি’-র মেয়াদ। সেই চুক্তি অনুসারে বিশ্বের ৩৭টি শিল্পোন্নত দেশ পরিবেশ দূষণের জন্য প্রধান ভাবে দায়ী কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ২০১২-র মধ্যে ১৯৯০ সালের তুলনায় পাঁচ শতাংশ কমিয়ে আনবে। ২০১২-য় এই চুক্তির নবীকরণ হওয়ার কথা।
আর এখানেই আপত্তি ছিল উন্নত দেশগুলির। তাদের মতে ভারত আর চিনের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলি এই চুক্তির আওতায় নেই। অথচ তারাও যথেষ্ট পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড-সহ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ করে বলে দাবি তাদের। তাই চুক্তি নবীকরন করতে গেলে সব দেশকেই এই চুক্তির আওতায় রাখতে হবে বলে দাবি তোলে উন্নত দেশগুলি। এই চুক্তি নবীকরণের ক্ষেত্রে ভারত সাহায্য করছে না বলে কানাডার তরফে সরাসরি অভিযোগও তোলা হয়। ব্রিটেনের পরিবেশমন্ত্রী ক্রিস হিউনে উন্নয়নশীল দেশগুলির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন, “যত দিনে ওরা উন্নত হবে, আমরা মরে যাব। আমরা এটা কেন হতে দেব?” এর পরেই রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে স্থির করা হয় যে, চুক্তির আওতায় সব দেশকেই রাখা হবে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নামে ভারত। ভারতের তরফে পরিবেশমন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজন দেশের আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে এক দীর্ঘ বক্তৃতা দেন। উন্নত দেশগুলির কাছে তিনি আবেদন রাখেন, যদি এই নতুন চুক্তি মেনে নিতে হয় তা হলে প্রতিটি শিল্পে দূষণ রোধে নতুন যন্ত্র বসাতে যে অর্থের ব্যবস্থা করতে হবে তা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, “আমাকে তা হলে একটি সাদা চেক সই করে দিতে হবে যার অর্থের পরিমাণ হবে একশো কোটি কুড়ি লক্ষ মানুষের সারা জীবনের রোজগারের পরিমাণ। অথচ তারা জানতেই পারবে না ঠিক কী কারণে তারা সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হল।” কানাডার অভিযোগের উত্তরে তিনি জানান, ১৯৯৭ থেকে চালু হওয়া কিয়োটো চুক্তি যারা মেনে আসেনি, আসার প্রয়োজন মনে করেনি, অথচ মানার সুযোগ ছিল, তারা কোনও কৈফিয়ত দেওয়ার চেষ্টা করল না। উল্টে সব দেশকেই নতুন চুক্তি মানার দাবি করছে কী করে সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। চিনের তরফে জি জেনহুয়াও নটরাজনের কথার সমর্থন জানান। তিনি বলেন, “আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলি যথাসম্ভব চেষ্টা করছি দূষণ কমাতে।” পরে বৈঠকে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে। এর পরেই সব দেশ নতুন চুক্তি মানতে রাজি হয়। নতুন এই চুক্তি কার্যকর হবে ২০২০ সাল থেকে। ইতিমধ্যে ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত উন্নত দেশগুলির জন্য ‘কিয়োটো চুক্তি’-র নবীকরণ করা হবে বলে ঠিক করা হয়েছে।
কিন্তু এর মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক। পরিবেশবিদদের মতে এই নতুন চুক্তি অনুযায়ী কেউ আইন লঙ্ঘন করলে কী শাস্তি হবে তা বলা নেই। চুক্তির ভাষা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড’ (ডব্লিডব্লুএফ)-র তরফে সামান্থা স্মিথ বলেন, “এরা এমন ভাবে চুক্তি করেছে যাতে সবাই আইনের ফাঁক দিয়ে বেআইনি কার্যকলাপ করতে পারে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.