হুগলি জেলার সদর শহর চুঁচুড়ায় ব্যাপক যানজট নিত্যদিনের চিত্র। শহরের সদাব্যস্ত এলাকা ঘড়ির মোড় থেকে শুরু করে খড়ুয়াবাজার, বাসস্ট্যান্ড, তোলাফটক, কামারপাড়া, হাসপাতাল রোড-সহ নানা জায়গায় সব সময়েই যেন ‘তালগোল পাকিয়ে’ গাড়িঘোড়া। স্টেশন-লাগোয়া রাস্তায় নিত্যযাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হন।
জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যান নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এখানকার কিছু রাস্তা এতই সরু যে, যানজটের সমস্যা দূর করতে হলে হয় অনেক বাড়ি অথবা দোকান ভাঙতে হবে।”
ঘড়ির মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তায় যানজটের পাশাপাশি মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে ফুটপাথ জুড়ে খুচরো ব্যবসায়ীরা পসার সাজিয়ে রাখায়। গোটা ফুটপাথ হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় পথচারীদের হাঁটতে হয় রাস্তার উপর দিয়ে। অভিযোগ, পুলিশ সুপারের অফিসের নাকের ডগাতেই এই অবস্থা চললেও পুলিশ চোখ বুজে থাকে। জেলা আদালত, জেলা পরিষদের সামনের রাস্তারও একই চেহারা। পুরসভাও উচ্চবাচ্য করে না।
পূর্বতন সরকারের আমলে বামফ্রন্ট পরিচালিত হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভা বেশ কয়েকবার সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছিল। যদিও এলাকাবাসীর অভিযোগ, “সবটাই লোক দেখানো।” ফলে সাধারণ মানুষের সমস্যা একই তিমিরে রয়ে গিয়েছে। বহু দোকানপাট কার্যত রাস্তা ঢেকে দিয়েছে। ফলে, আয়তনে সরু হয়ে গিয়েছে এই সব রাস্তা। দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নীচে শহরের মূল বাসস্ট্যান্ড ছিল। রোদ-বৃষ্টিতে মাথা ঢাকার ছাউনি ছিল না। কয়েক বছর আগে পুরসভার উদ্যোগে ছাউনি-বেষ্টিত বাসস্ট্যান্ড নির্মিত হয়। তৎকালীন পুরবোর্ড বাসস্ট্যান্ডের উপরের তলে বাসস্থান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে পুরসভার আয়ের রাস্তা পরিষ্কার করেছেন ঠিকই, কিন্তু বাসস্ট্যান্ডটি আদৌ বাস রাখার উপযোগী হয়নি। জায়গা ছোট হওয়ায় বহু বাস স্ট্যান্ডের ভিতরে জায়গা না পেয়ে রাস্তার উপরেই যেমন খুশি দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে, যানজট আরও তীব্র হয়। শুধু অফিস টাইমেই নয়, দিনের অধিকাংশ সময়েই এই সমস্যায় নাকাল হন মানুষ। |
সারা দিনে এই বাসস্ট্যান্ডে শ’তিনেক বাস দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু স্ট্যান্ডে মাত্র ১২০টি বাস দাঁড়াতে পারে। বিষয়টি প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের গোচরে এনেও কোনও ফল হয়নি বলে স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য। এ ব্যাপারে হুগলি জেলা বাস ওনাসর্র্ অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি দেবব্রত ভৌমিকের দাবি, ‘‘নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরির সময় তৎকালীন পুরবোর্ডের কাছে আমরা ভিতরের জায়গায় কতগুলি বাস রাখা যাবে, তার ভৌগোলিক অবস্থাটা দেখার আর্জি জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা শোনেননি। ওঁরা নিজেদের ইচ্ছেমতো স্ট্যান্ড নির্মাণ করলেন।” তিনি বলেন, “স্ট্যান্ডে মোট বাসের অর্ধেকেরও কম বাস রাখা যায়। নিরুপায় হয়েই রাস্তার ধারে বাস দাঁড় করাতে হয়।”
বর্তমান হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার তৃণমূল পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্ট্যান্ডের বাইরে বাস রাখার ফলে রাস্তায় যানযটের সমস্যা দূর করার জন্য সম্প্রতি প্রশাসনের উদ্যোগে সব বাস ইউনিয়নের সদস্য এবং সিন্ডিকেটের সাথে বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, স্ট্যান্ডের মধ্যে যেন কোনভাবেই অকেজো গাড়ি রেখে জায়গা দখল করে না রাখা হয়। পাশের একটি ফাঁকা জায়গায় বাস রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, হুগলি মোড়ের কাছে জীবন পালের বাগান এলাকায় একটি নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর ও জেলা প্রশাসনের কাছে।’’ |