নিজস্ব সংবাদদাতা • উলুবেড়িয়া |
চলে গেলেন প্রাক্তন সমবায় মন্ত্রী তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা রবিন ঘোষ (৮১)।১৯৭২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আট বার তিনি উলুবেড়িয়া দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়াই করেছেন। জিতেছেন ছ’বার। ১৯৭৭ সাল থেকে তিনি লড়াই করেছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের টিকিটে। ২০০৬ সালে জয়ী হয়ে সমবায় দফতরের মন্ত্রী হন রবিনবাবু। রবিবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। সেপ্টেম্বর মাস থেকে অসুস্থ অবস্থায় এখানেই ভর্তি ছিলেন তিনি। উলুবেড়িয়ায় রবিনবাবু ছিলেন কার্যত ‘মুকুটহীন সম্রাট’। তাঁর বিধানসভা এলাকার বহু যুবক মুম্বইয়ে জরির কাজ করেন। নয়ের দশকের শেষে মুম্বই থেকে উলুবেড়িয়ার কয়েকজন জরির কারিগরকে বাংলাদেশি সন্দেহে ট্রেনে চাপিয়ে মুম্বই পুলিশ নিয়ে যাচ্ছিল ‘পুশ ব্যাক’ করার জন্য। খবর পেয়ে উলুবেড়িয়া স্টেশনে হাজির হয়ে ট্রেনটি আটকে দিয়ে ছিলেন রবিনবাবু। তাঁর নেতৃত্বে গ্রামবাসীরা ওই যুবকদের মুম্বই পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বিধায়কের বিরুদ্ধে। তিনি অবশ্য স্বাভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে সে সব আমল দেননি। রবিনবাবুর সাফ বক্তব্য ছিল, “ওই সব যুবকেরা এ দেশের বৈধ নাগরিক। তাদের স্বার্থে যা করেছি বেশ করেছি।” এই রকম একাধিক ঘটনার মধ্যে দিয়ে তিনি নিজেকে পরিণত করেছিলেন ‘জনগণের নেতা’ হিসাবে। উলুবেড়িয়ার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তিনি সোচ্চার ছিলেন।১৯৪৮ সালে ছাত্রজীবন থেকে রবিনবাবুর রাজনীতি পথচলার শুরু। তাঁর বরাবরের আদর্শ ছিলেন এলাকার ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নানু ঘোষ। প্রতিবছর অগস্ট মাসে নানু ঘোষের জন্মদিন পালন করতেন আড়ম্বরের সঙ্গে। গত বছরেও অসুস্থ অবস্থাতেই নানু ঘোষের জন্মদিনের উৎসবে যোগ দেন তিনি। তারপর থেকে শরীর খারাপ হয়ে যায়। সেপ্টেম্বরে ভর্তি হন এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে।
বামফ্রন্টে থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর টানাপোড়েন ছিল। ১৯৮৭ সালে তিনি কংগ্রেসের কাছে পরাজিত হন। রবিনবাবুর অভিযোগ ছিল, সিপিএমই চক্রান্ত করে তাঁকে হারিয়েছে। ২০০৬ সালেও তাঁকে হারানোর চক্রান্ত সিপিএমের তরফ থেকে হয়েছিল বলে রবিনবাবু ঘনিষ্ঠ মহলে অভিযোগ করেছিলেন। মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি প্রকাশ্য জনসভায় সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করতেন। সিপিএম নেতারা জেলা বামফ্রন্ট এবং রাজ্য বামফ্রন্টের কাছে রবিনবাবুর বিরুদ্ধে নালিশও জানাতেন। |