সম্পাদকীয় ২...
শিক্ষা-দূষণ
ওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয় হইলেও সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে সেখানে গত তিন বছর ধরিয়া ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচন বন্ধ ছিল। অবশেষে শর্তসাপেক্ষে সেই স্থগিতাদেশ উঠিয়াছে। কিন্তু আদালতের আপত্তি বহাল রহিয়াছে। প্রার্থীদের বয়ঃসীমা, এক বারের বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপে জড়িত থাকার রেকর্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর জুড়িয়া পোস্টার-ব্যানারের ছড়াছড়ির উপর প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জে এম লিংদোর সুপারিশকৃত নিষেধাজ্ঞাগুলি লঙ্ঘন করার জন্যই শীর্ষ আদালত জেএনইউ-তে ছাত্র সংসদের নির্বাচন বন্ধ করিয়াছিল। লক্ষ্য ছিল, ছাত্র-ইউনিয়নকে রাজনীতিমুক্ত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের উপযুক্ত পরিবেশ ফিরাইয়া দেওয়া। এখন যখন আবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ছাড়পত্র মিলিল, তখন প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়ঃসীমা কিছুটা শিথিল করার পাশাপাশি পোস্টার ব্যবহারের অনুমতিও মিলিয়াছে। কিন্তু তাহাতে বিদ্যাস্থানকে রাজনীতির আখড়ায় পরিণত করার প্রবণতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি ভবিষ্যতের রাজনীতিক তৈয়ারির প্রশিক্ষণ-শিবির হিসাবে দীর্ঘ কাল ব্যবহার করিয়া আসিয়াছে। ফলে ছাত্র-সংসদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেখানে চরম আকার ধারণ করে। বছর-বছর ফেল-করা ছাত্রনেতারা সংসদের বিভিন্ন পদে বহাল থাকেন, বাহির হইতে দলীয় রাজনীতিকরা আসিয়া প্রচারপর্ব চালান, স্লোগানে মুখরিত, পোস্টারে ছয়লাপ শিক্ষাকেন্দ্র দলীয় নির্বাচনী দফতরের চেহারা লয়। প্রতিযোগিতা হইতে হাতাহাতি, খুনোখুনি পর্যন্ত গড়ায়, বিভিন্ন দলের আশ্রিত স্থানীয় দুষ্কৃতীরা যোগ দেয়। পশ্চিমবঙ্গের যে-কোনও কলেজের ছাত্র-সংসদ নির্বাচনে নিয়মিত এ-ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায়। এগুলি বন্ধ করার জন্যই সর্বোচ্চ আদালত জে এম লিংদোকে সংস্কারের সুপারিশ করার দায়িত্ব দিয়াছিল। সেই সুপারিশে প্রার্থীদের ক্লাসে হাজিরা ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ করারও সুপারিশ ছিল। অর্থাৎ কেবল খাতায় নাম-লেখানো ছাত্র নয়, নিয়মিত অধ্যয়নে নিরত শিক্ষার্থীদের সামনেই প্রতিযোগিতার পথ খোলা থাকিত। সেই সুপারিশও আদালত শিথিল করিয়াছে।
স্বভাবতই জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-সংসদ নির্বাচনকে রাজনীতিমুক্ত করার অভিপ্রায়টি মাঠে মারা যাওয়ারই সম্ভাবনা। অথচ কেবল জেএনইউ নয়, দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কেই দলীয় রাজনীতির বিষাক্ত নিয়ন্ত্রণ হইতে মুক্ত করা দরকার। মধ্যপ্রদেশে এই রাজনীতি ও তাহাকে কেন্দ্র করিয়া সমাজবিরোধী সক্রিয়তা একজন বরিষ্ঠ অধ্যাপকের হত্যারও কারণ হইয়াছে। অধ্যয়ন-অধ্যাপনার অন্তর্ধান, গুণ্ডামি, রাজনীতির পাঠশালা এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কেই কলঙ্কিত করিতেছে। বহু নাম-করা সাবেক উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র আজ এই প্রক্রিয়ায় রুগ্ণ। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাহার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরকে রাজনীতির আখড়া বানাইতে দিলে ইহাই ঘটিবে। বিদ্যাচর্চার এই ক্ষেত্রগুলি হইতে মিছিল-মিটিং, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাসিত হউক। ছাত্র-সংসদ কেবল ছাত্রস্বার্থ এবং পঠন-পাঠন তথা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার স্বার্থ রক্ষার সংগঠনে পরিণত হউক। অন্যথায় দেশের উচ্চশিক্ষার অঙ্গনটিকে দূষণমুক্ত করা যাইবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.