শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় |
প্রসঙ্গ অশোক মিত্র মহাশয়ের লেখা ‘পরিবারতন্ত্র: এই দেশে, এই বঙ্গে’ (৬-১২)। প্রথমত, ঘটনা হল, (ম্যাট্রিকুলেশন) পরীক্ষায় শ্যামাপ্রসাদ প্রথম হননি। অতএব অশোকবাবুর ‘শীতের মন্থর দুপুরে শ্যামাপ্রসাদের প্রেসিডেন্সি কলেজের মাঠে ঈষৎ অসহায় ভাবে হাঁটা’-র গল্প অর্থহীন। সে বছর প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য
শ্যামাপ্রসাদ তৈরিই হননি। কারণ, তাঁর ষোলো বছর বয়স হয়নি। সে আমলে প্রবেশিকার জন্য যা অত্যাবশ্যক ছিল। অতএব ক্লাস টেন-এ ওঠার পর তাঁর বসে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না। তাই চলে গিয়েছিলেন মধুপুরে ছুটি কাটাতে। ইতিমধ্যে প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হল একবার নয়, দু-দু’বার। বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করল, যারা এর মধ্যে ষোলো বছর উত্তীর্ণ হয়েছে, তারাও পরীক্ষা দিতে পারবে। তখন শ্যামাপ্রসাদকে তড়িঘড়ি মধুপুর থেকে নিয়ে আসা হল। তিনি পরীক্ষা দিলেন এবং দশ টাকা বৃত্তি পেলেন। যদিও যথেষ্ট সময় পেলে ‘তার চেয়েও অনেক ভাল ফল লাভ করার সম্ভাবনা ছিল’। (সূত্র: কিশোর মৈত্রী, মিত্র ইনস্টিটিউশন ভবানীপুর ব্রাঞ্চ, শ্যামাপ্রসাদ শতবার্ষিকী বিশেষ সংখ্যা, ২০১১, পৃ: ৪৫)
স্যার আশুতোষের পরিচয়ে অশোকবাবু লিখেছেন, ‘রক্ষণশীল গোঁড়া হিন্দু। মুসলমান সম্প্রদায় সম্বন্ধে স্বভাব-তাচ্ছিল্যবোধ’ অথচ উদাহরণ দিয়েছেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহের কদর বোঝার! কোনও অধ্যাপকের পরীক্ষার খাতা পদ্মার জলে পড়ে যাওয়া এই সব গল্পের কোনও ভিত্তি আছে কী? উপাচার্য প্রমথনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্রের প্রথম না-হওয়ার ব্যাপারে তাঁর মায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা-প্রধানকে ডেকে বকাঝকা করার গল্পে অশোকবাবু একটা ‘নাকি’ ঢুকিয়েছেন। প্রসঙ্গত, পুত্রটি তার পর ভারতের পররাষ্ট্র বিভাগের উচ্চপদস্থ চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধিত্বও করেছেন।
তথাগত রায়। প্রাক্তন সভাপতি ভারতীয় জনতা পার্টি, পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা-৯১
|
যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন ‘...আমি কোনও রাজনৈতিক দলের সাংসদ নই। আমি প্রথমে সুমন (২৯-১১)। সুমনবাবু কোনও রাজনৈতিক দলের সাংসদ না হলে কি নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে জিতেছিলেন? যে দলের কাঁধের উপর ভর করে সংসদে গেলেন, সেই দলকেই সুমনবাবু অস্বীকার করেন কী ভাবে?
রতন চক্রবর্তী। উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
|
পত্রিকা বিভাগে শ্রদ্ধেয় লেখক শংকরের শ্রীরামকৃষ্ণ বিষয়ক একটি লেখা (২৯-১০) প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনাম: ‘কাশীপুর নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন’। ওই প্রবন্ধের এক স্থানে লেখক লিখেছেন, ‘আমার জীবনের গ্রেটেস্ট ইভেন্ট যদি জিজ্ঞাসা করেন, তা হচ্ছে পরমহংসদেবের সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে সাক্ষাৎ।! শুধু একজন লেখকের পক্ষে নয়, যে মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে ‘যত মত তত পথ’ নামক মহাবাণী প্রথম উচ্চারিত হয়, এ কালের মানুষের পক্ষেও তার থেকে অবিস্মরণীয় ইভেন্ট আর কী হতে পারে।... |
দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে ‘যত মত তত পথ’ নামক মহাবাণী শ্রীরামকৃষ্ণদেবের শ্রীমুখ থেকেই উচ্চারিত হয়েছিল বলে উল্লেখ করতে চেয়েছেন বলে আমার অনুমান। আমার প্রশ্ন, শ্রদ্ধেয় লেখক ওই কথাটি (যত মত তত পথ) কোন প্রামাণিক গ্রন্থে পেয়েছেন? এ বিষয়ে আলোকপাত করলে বিশেষ বাধিত হব। মাস্টারমশাই (মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত) লিখিত ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’-র পাঁচ খণ্ডের কোনও খণ্ডেই উল্লেখ নেই। নেই স্বামী সারদানন্দ লিখিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ লীলাপ্রসঙ্গে’ও। কেশবচন্দ্র সেন ও সুরেশচন্দ্র দত্ত লিখিত শ্রীরামকৃষ্ণদেবের উপদেশাদি সংবলিত জীবনী গ্রন্থেও এর উল্লেখ মেলে না।
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতে ওই বাণীরই আভাস পাওয়া যায় অন্য ভাষায়। ‘যত মত তত পথ’ শ্রীরামকৃষ্ণদেবের উক্তি বলে প্রচলিত একটি অপূর্ব তত্ত্বকথা। প্রচার বাহুল্যে এটি ধার্মিক মহলে প্রবাদ বাক্যে পরিণত। পরিমলকান্তি দাস। হাওড়া-৭১১১০১
|
‘যত মত তত পথ’ নামক বিখ্যাত উক্তিটি কোনও প্রামাণিক গ্রন্থে খুঁজে না-পেয়ে পরিমলকান্তি দাস মহাশয় যে কষ্ট করে পত্রাঘাত করেছেন তার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।
স্বামী সারদানন্দ রচিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ বইটির ২য় খণ্ড ১০১ পাতার প্রতি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই অধ্যায়টির নাম গুরুভাব-সম্বান্ধ শেষ কথা। সারদানন্দ লিখছেন: ‘‘সর্ব ধর্মমতই সত্য‘যত মত তত পথ’ এই মহদুদার কথা জগৎ ঠাকুরের শ্রীমুখেই প্রথম শুনিয়া যে মোহিত হইয়াছে, এ কথা আমাদের অনেকে এখন জানিতে পারিয়াছেন।’’
স্বামী প্রেমানন্দের একটি বিখ্যাত লেখা সম্পাদক স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ তাঁর ‘যুগপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ’-এ মুদ্রিত করেছেন। ৪৯৪ পৃষ্ঠায় পরিমলবাবু দেখতে পারেন স্বামী প্রেমানন্দের উক্তি: ‘সকলেই নিজের মতটাকে শ্রেষ্ঠ বলে গিয়েছেন এবং কেউ কেউ বলেছেন: তার মত অবলম্বন না-করলে আর কিছু হবে না। কিন্তু আমাদের ঠাকুর বলতেন: যত মত তত পথ। কারণ, তিনি অনন্ত।’ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় শিষ্যদের অন্যতম প্রেমানন্দ একই প্রবন্ধে বলছেন, ‘তিনি নিজ জীবনে দেখালেন, সব মত অবলম্বন করে সব পথ দিয়ে সত্য লাভ করা যায় এবং বললেন, ঝগড়া বিবাদ দরকার নেই, সব মত ঠিক’। স্বামী প্রেমানন্দ (১৮৬৯-১৯১৮) বাবুরাম মহারাজ বলে পরিচিত। শ্রীরামকৃষ্ণ কথিত ছয় জন ঈশ্বরকোটির মধ্যে তিনি একজন। দক্ষিণেশ্বরে, শ্যামপুকুরে এবং কাশীপুরে বাবুরাম নানা ভাবে শ্রীরামকৃষ্ণের সেবা করেছিলেন।
শংকর। কলকাতা-১৯ |