যাত্রীদের আগাম না-জানিয়েই রবিবার থেকে জঙ্গলমহলে রাতে আবার ট্রেন চালানো হবে বলে পরিকল্পনা করেছিল রেল। কিন্তু আগেভাগে যাত্রীদের খবর না-দিয়ে কেন ট্রেন চালানো হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ দেখা দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত স্থগিত রাখতে হল সেই সিদ্ধান্ত। সব রকম চেষ্টা সত্ত্বেও রাতের ট্রেন আপাতত বন্ধই থাকল জঙ্গলমহলে।
রাতে ফের ট্রেন চালানো হবে না বলে খবর রটে যেতেই টাটানগরে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি এবং ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন ট্রেন চালানোর অনুমতি দিচ্ছে না, এই অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুতুল পোড়ান বিজেপি-র সমর্থকেরা। পরে টাটানগর স্টেশনে সাংসদ অজয় কুমারের নেতৃত্বে প্রায় দেড় ঘণ্টা ট্রেন বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এই বিক্ষোভের জেরে এ দিন হাওড়া-বরবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস প্রায় দেড় ঘণ্টা আটকে ছিল। রেলকর্তারা শীঘ্রই রাতে ট্রেন চালানোর আশ্বাস দেওয়ার পরে অবরোধ ওঠে। |
রাতের ট্রেন চালু না হওয়ায় জেভিএম কর্মীদের ক্ষোভ টাটানগর স্টেশনে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী |
জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার পরের দিন থেকেই জঙ্গলমহলে রাতে যাত্রী-ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। হাওড়া থেকে টাটানগর পর্যন্ত মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার মধ্যেই পড়ছে ঝাড়গ্রাম, সর্ডিহা, বাঁশতলার মতো স্টেশন। মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে পড়ে টাটানগর, চক্রধরপুর শাখাও। জ্ঞানেশ্বরীর মতো আবার আক্রমণ হতে পারে, এই আশঙ্কাতেই এত দিন ধরে রাতের ট্রেন বন্ধ রাখা হয়েছে। রাতের ট্রেনগুলি এখন ভোরে ছাড়া হচ্ছে। গত ৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের পুলিশের সঙ্গে রেল বোর্ডের বৈঠকের পরে শীঘ্রই রাতে আবার ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু কবে থেকে রাতে ট্রেন চলবে, তার সিদ্ধান্ত সে-দিন হয়নি বলে রেল বোর্ড সূত্রের খবর।
যাত্রীদের না-জানিয়েই রবিবার থেকে রাতে ফের ট্রেন চালানোর আয়োজন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি না-দিলেও দক্ষিণ-পূর্ব রেলও ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি শুরু করে। রেলকর্তাদের একাংশ বলেন, এ দিন শুধু খড়্গপুর-আদ্রা শাখায় ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অঘটনের আশঙ্কায় শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্তও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। খড়্গপুরের ডিআরএম আর কে কুলশ্রেষ্ঠ বলেন, “প্রথমে খড়্গপুর-আদ্রা লাইনে রাতের ট্রেন চালানোর নির্দেশ এসেছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তা বাতিল করে দেওয়া হয়।” খড়্গপুরের রেলওয়ে পুলিশ সুপার শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “নিরাপত্তার কারণেই রাতের ট্রেন বন্ধ রাখা হয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই তা চালু হয়ে যাবে।”
ট্রেন চালু হচ্ছে বলে শনিবারেই পূর্ব উপকূল রেল একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেয়। মুখে মুখে সেই খবর চাউর হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের না-জানানোর বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে বিভিন্ন মহলে। প্রশ্ন ওঠে, না-জানিয়ে পুরনো সময়সূচি মেনে ট্রেন ছাড়লে আগাম টিকিট কেটেও বেশির ভাগ যাত্রীই ট্রেন ধরতে পারবেন না। তাঁদের কী হবে?
পরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা জানান, এই বিষয়ে তাঁদের কিছু জানা নেই। পূর্ব উপকূল রেলও রবিবার সন্ধ্যায় ফের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জঙ্গলমহলে রাতের ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে বলে জানিয়ে দেয়। ট্রেন চালানোর কথা যাত্রীদের আগাম না-জানানোর কারণ কী? রেলকর্তাদের একাংশের অভিমত, এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণেই তাঁরা যাত্রীদের না-জানিয়ে রবিবার রাত থেকে পুরনো সময়সারণি মেনে ট্রেন চালাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। |