এত দিন যে অণ্ণা হজারে নিজের মঞ্চে রাজনৈতিক নেতাদের ধারে কাছে ঘেঁষতে দিতেন না, যাঁর মঞ্চ থেকে দু’বেলা নেতাদের গাল পাড়তেন অণ্ণার সাঙ্গোপাঙ্গোরা, আজ তাঁরই ‘প্রতীকী’ অনশন মঞ্চে হাজির হলেন বাম ও বিজেপির নেতারা।
নেতাদের উদ্দেশ্য প্রধানত দু’টি। এক, অণ্ণার জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা। এবং দুই, অণ্ণার সমর্থকদের মধ্যে প্রবল কংগ্রেস-বিরোধিতার হাওয়াকে আরও উস্কে দিয়ে সরকারকে আরও বিপাকে ফেলার চেষ্টা করা। সংসদের বাইরেও দিল্লির যন্তর-মন্তরে অণ্ণার এক দিনের অনশন মঞ্চে আজ বিরোধী ঐক্য বজায় রেখে কংগ্রেসকেও একঘরে করার চেষ্টা করলেন তাঁরা।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট আসার পর লোকপাল বিল নিয়ে আলোচনার জন্য অণ্ণার এক দিনের অনশনে সব দলের আমন্ত্রণ থাকলেও কংগ্রেস বা তার শরিক দলের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তা সত্ত্বেও বিজেপির অরুণ জেটলি, সিপিএমের বৃন্দা কারাট, সিপিআইয়ের এ বি বর্ধন, জেডি(ইউ)-এর শরদ যাদব থেকে শুরু করে এনডিএ-র বাকি শরিক দল, বিজেডি, তেলুগু দেশম ও সমাজবাদী পার্টির নেতারা অনশন মঞ্চে লোকপাল বিলের আলোচনায় শরিক হন। বিরোধী দলগুলি জানে, লোকসভায় লোকপাল বিল পাশ করানোর জন্য সরকারের পক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যা রয়েছে। যে কারণে তারা অনাস্থা প্রস্তাব আনছে না। এমনকী যে সব বিরোধী দল আজ মঞ্চে হাজির ছিল, তাদের মধ্যেও লোকপালের নানা বিষয়ে মতান্তর রয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকারকে কোণঠাসা করতে আজ সকলে সেখানে হাজির হলেন। |
রামধনু ঐক্য। অণ্ণার অনশন মঞ্চে বৃন্দা কারাট, অরুণ জেটলি,
এ বি বর্ধন ও শরদ যাদব। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই |
টিম-অণ্ণা বিরোধী পক্ষের এই মনোভাব আঁচ করলেও তাঁরা জানেন, সংসদ ও সেখানকার প্রতিনিধিদের সাহায্য ছাড়া লোকপাল বিল পাশ করানো সম্ভব নয়। সে কারণে অতীতের ছুতমার্গ ছেড়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে নিজেদের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু লোকপাল বিলের অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ে বিরোধীদের মধ্যেই মতান্তর দেখে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কিরণ বেদীর মতো টিম-অণ্ণার সদস্যরা চাইছিলেন, সার্বিক ভাবে অন্তত সব বিরোধী দলকে পাশে পেতে। খোদ অণ্ণাও হাজির হওয়া নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা আসায় আমাদের আন্দোলনের হাত আরও শক্ত হল। সরকার যদি এই বিল পাশ না করে, তা হলে আপনারাও আমাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে বিরোধিতা করুন। আমাদের সঙ্গে জেলে চলুন। দেশের একটি জেলও খালি রাখা যাবে না।”
কিন্তু সিংহ ভাগ বিরোধী নেতা সেই মঞ্চেই অণ্ণা ও তাঁর টিমের সদস্যদের পরামর্শ দেন, লোকপাল বিল নিয়ে অনড় মনোভাব না নিতে। অরুণ জেটলি থেকে বৃন্দা কারাট, সকলেরই বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় নিয়ে আসার মতো বড় বিষয়ে বিরোধী দলগুলি একমত। বাকি ছোটখাটো বিষয়গুলি সংসদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হোক। এক বাক্যে সকলেই জানান, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংসদের অধিকারই সর্বোচ্চ। টিম-অণ্ণা যেন ভেবে না বসেন যে তাঁদের দাবি অনুযায়ী জনলোকপাল বিলের সব ‘দাঁড়ি-কমা’ হুবহু মানা সম্ভব হবে। |