প্রত্যাশিত ভাবেই দিল্লির যন্তরমন্তরে অণ্ণা হজারেদের ডাকা মহাবিতর্কে অংশ নিল না কংগ্রেস। বরং তা শেষ হতেই কেন্দ্রে প্রধান শাসক দলের তরফে দাবি করা হল, ‘অরাজনৈতিক’ অণ্ণার ‘রাজনৈতিক’ মঞ্চই আজ বুঝিয়ে দিয়েছে লোকপাল বিল নিয়ে সরকারের অবস্থানের পক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। কংগ্রেসের পাশাপাশি ইউপিএ-র কোনও শরিক দলের নেতাও সেখানে উপস্থিত হননি। সেই সঙ্গে বসপা, আরজেডি-র মতো সরকারের সমর্থক দলগুলিও গরহাজির ছিল।
|
অণ্ণার মঞ্চে বৃন্দা কারাট ও অরুণ জেটলি। রবিবার। ছবি: পিটিআই |
কংগ্রেসের কৌশল হল, অণ্ণাদের কোণঠাসা বা ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে দেওয়া। সে জন্য ক’দিন আগে সংসদে দাঁড়িয়ে লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, “বাইরে থেকে কোনও শক্তিকে সংসদকে অস্থির করতে দেবেন না।” আর এখন সেই কৌশলে হেঁটেই লোকপাল বিল নিয়ে ফের সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারির কথায়, “লোকপাল বিল নিয়ে কংগ্রেস একরোখা কোনও অবস্থান নেয়নি। রাজনৈতিক দল হিসাবে লোকপাল প্রশ্নে কংগ্রেসের সুনির্দিষ্ট মত রয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি দমনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কংগ্রেস সকলের মত নিয়ে চলতে চাইছে।” আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী কুমারের বক্তব্য, “কংগ্রেস কঠোর ও কার্যকরী লোকপাল গঠন করতে বদ্ধপরিকর। সই আইন প্রনয়ণ হবে সংসদে। সংসদীয় ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে পারে এমন শক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। সংসদ যখন চলছে তখন বাম-বিজেপি লোকপাল বিল নিয়ে সংসদেই বিতর্ক করতে পারতেন।” তবে সর্বদল বৈঠক ডেকে সকলকে এক সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা দেওয়া কংগ্রেসের নিছক রাজনৈতিক কৌশল। তা ছাড়া যে হেতু লোকপালের আওতায় প্রধানমন্ত্রী পদ ও সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখাকে রাখার বিষয়টি এখন প্রধান মতান্তরের বিষয়, তাই সর্বদল বৈঠকে এই দুই বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিতও দিতে পারে সরকার। কিন্তু আসল বিষয় হল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে শরিক দল তৃণমূল পাশে ছিল না বলে ভোটাভুটি থেকে সরকার পিছিয়ে এসেছিল ঠিকই। কিন্তু লোকপাল বিল নিয়ে সরকার ও শরিকদের মধ্যে বিশেষ মতান্তর নেই। শরিক এবং সমর্থক দলগুলি সরকারের পক্ষে থাকলে অনায়াসেই লোকপাল বিল পাশ হয়ে যাবে। রাজ্যসভায় সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। কিন্তু সপা-বসপা সমর্থন করলে সেখানেও বিলটি পাশ করাতে অসুবিধা হবে না। যদিও সমাজবাদী পার্টি নেতা রামগোপাল যাদব আজ অণ্ণার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি বক্তৃতায় পরিষ্কার বলেন,“অণ্ণাকে জানিয়ে দিতে চাই, দয়া করে এমন আশা করবেন না যে আপনাদের সব ক’টি দাবি মেনে নেওয়া হবে।” কংগ্রেস নেতাদের মতে, যে হেতু উত্তরপ্রদেশে ভোট আসন্ন এবং সেখানে দুর্নীতির বিষয়টি মায়াবতী সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যস্তরে বিরোধীদের বড় অস্ত্র, তাই অণ্ণার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সপা নেতারা। কিন্তু লোকপাল বিল নিয়ে সরকারের অবস্থানের সঙ্গে তাঁদের নীতিগত ফারাক নেই। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, সম্ভবত ১৯ ডিসেম্বর নব কলেবরে লোকপাল বিলটি সংসদে পেশ করা হবে ও তা নিয়ে আলোচনা হবে। বলা যায়, তার আগে অণ্ণার মঞ্চ সংসদে সংখ্যার হিসেবটা অনেকটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে। |