আসন্ন প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন তাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইয়াংলাক শিনাবাত্রা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভারতের পক্ষ থেকে পর পর তিন বছর এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ারই তিন রাষ্ট্রপ্রধানকে। কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে চিনের প্রভাব এবং ক্রমবর্ধমান শক্তির দিকটি মাথায় রেখে মনমোহন সরকার তার ‘পুবে তাকাও’ নীতিকে আরও বেশি কার্যকর করতে চাইছে। আর তাই পূর্বের রাষ্ট্রগুলির জন্য এই ধারাবাহিক আমন্ত্রণ-বার্তা।
প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো জাতীয় অনুষ্ঠানে যে সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয় তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সখ্য বাড়ানোর বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে ভারতের। অর্থাৎ, প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এও এক কূটনৈতিক দৌত্য। ২০১০ সালে এসেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি মিয়াং বাক। আর চলতি বছরে অতিথি ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট। আগামী প্রজাতন্ত্র দিবসে তাইল্যান্ডের মহিলা প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সেই নীতিকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় নয়াদিল্লি। হংকং থেকে সুদান পর্যন্ত বিস্তীর্ণ সমুদ্ররেখায় চিনের আধিপত্য বিস্তারের প্রবল চেষ্টা (যা ‘স্ট্রিং অ্যান্ড পালর্’ নীতি হিসেবে পরিচিত) এবং ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিতে বন্দর থেকে বিভিন্ন পরিকাঠামো তৈরি করার প্রবণতার উপরে সতর্ক নজর রেখেছে নর্থ ব্লক। পাল্টা কৌশল হিসাবে চিনের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বেজিংকে বিশেষ চাপের মধ্যে রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। গত অক্টোবরে ভিয়েতনাম এবং মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট ভারত সফর করে গিয়েছেন। আগামী বছর ভারত-এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করবে নয়াদিল্লি। দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলির মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তিও ক্রমশ প্রসারিত করছে ভারত।
স্বাভাবিকভাবেই গোটা বিষয়টি ভাল চোখে দেখছে না বেজিং। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ জাপান, ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়া সফর করে ফেরার পর সুর চড়িয়েছিল চিন। সে দেশের সরকারি মুখপত্র ‘পিপলস ডেইলি-তে লেখা হয়েছিল ভারত ‘আঞ্চলিক অসাম্য তৈরি করে চিনকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে।’ বেজিং যে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য শরিক সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ‘পিপলস ডেইলি বলেছিল, “এই ‘পুবে তাকাও’ নীতির মাধ্যমে জোট নিরপেক্ষতা থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছে নয়াদিল্লি।” ভারত অবশ্য চিনের এই সব অভিযোগে কর্ণপাত না করে জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই এগোতে চাইছে। তবে চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়লেও কৌশলগত ক্ষেত্রে কিন্তু যথেষ্ট জটিলতা দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি দক্ষিণ চিন সাগর থেকে ভারতীয় সংস্থার তেল উত্তোলন নিয়ে চিনা নিষেধাজ্ঞা অথবা দলাই লামাকে কেন্দ্র করে দু’দেশের সম্পর্ক যথেষ্ট টানটান জায়গায় রয়েছে। এমতাবস্থায় তাইল্যান্ডের মত একটি দেশের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠতা এই উত্তেজনায় ঘি ঠালতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। আপাতত ভারতের আশু লক্ষ্য, মায়ানমারের মধ্য দিয়ে তাইল্যান্ডের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ তৈরি করা। এর পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি হবে খুব শীঘ্রই। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের অনেক জঙ্গি এবং ভারতীয় অপরাধীরা অনেক ক্ষেত্রেই তাইল্যান্ড থেকে তাদের কার্যকলাপ চালায়। এই বিষয়টিকে বন্ধ করার জন্যও একটি চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে দু’দেশের মধ্যে। |