আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যাচ্ছিলেন ১ নম্বর বিমানবন্দর এলাকার বাসিন্দা প্রণব কর। দমদম সেন্ট্রাল জেল মোড় পেরোতেই যানজটে আটকাল বাস। সেই জট ঠেলে যখন হাসপাতালে পৌঁছলেন, অনেক ‘দেরি’ হয়ে গিয়েছে।
এটি একটি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ মাত্র। বরং এই যানজটই জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে দমদম এয়ারপোর্ট থেকে নাগেরবাজার মোড় পর্যন্ত এলাকার বাসিন্দা এবং যশোহর রোডের নিত্যযাত্রীদের। কেন? স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর পিছনে কারণ একটাই। নাগেরবাজার এলাকায় যশোহর রোডের উপরে আধা-নির্মিত উড়ালপুল। অথচ ওই পথে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। রয়েছে একাধিক স্কুল-কলেজ এবং সরকারি অফিস। কিন্তু গত বছর দুয়েক ধরে শ্যামবাজার থেকে বারাসত যোগাযোগের প্রধান রাস্তাটি নিয়ম করেই থমকে থাকছে যানজটে।
নাগেরবাজারের অমরপল্লি থেকে দমদম সরোজিনী নাইডু কলেজ পর্যন্ত এই উড়ালপুলের কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ঠিক হয়েছিল ১৮ মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে কাজ। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরোনোর পরেও তা শেষ করতে পারেনি নির্মাণকারী সংস্থা। আর কাজ শেষ না হওয়ার ফলেই যশোহর রোডের ওই অংশ দিয়ে যাতায়াত করা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে কার্যত ভেঙে পড়েছে বিমানবন্দর থেকে নাগেরবাজার যান চলাচল ব্যবস্থাও। |
উড়ালপুলের অসমাপ্ত কাজের জেরে এ ভাবেই নিত্য যানজট। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
কাজে দেরির কথা মেনে নিয়েছেন নির্মাতা সংস্থার চেয়ারম্যান কাজল সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “জায়গাটা এত ঘিঞ্জি যে প্রকল্পের মূল কাজ শুরুর আগে ভূগর্ভের সংযোগ সরানোর সময় থেকেই সমস্যা হচ্ছে।” রাতে ছাড়া কাজ করা যাচ্ছে না জানিয়ে তাঁর আরও বক্তব্য, “নির্মীয়মাণ সেতুর দু’পাশে বাজার বসে। তা না সরালে সমস্যা হচ্ছে। গোড়া থেকে বার বার এ কথা বলেও লাভ হয়নি।” স্থানীয় বাসিন্দাদের পাল্টা দাবি, উড়ালপুলের কাজ চলার জন্য মাঝে মাঝেই রাস্তার একাংশ বন্ধ করে রাখা হয়। অন্য দিক দিয়ে চলাচল করে গাড়ি। কিন্তু সে রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ। কোথাও আধ হাত গর্ত, কোথাও বা রাস্তার উপরেই পড়ে রয়েছে লোহালক্কড়। আর তা কাটিয়েই চলছে অটো-বাস-ট্যাক্সি। এ প্রসঙ্গে কাজলবাবু বলেন, “সেতুর এক একটা গার্ডারের (লোহার বিম) ওজন ৫০ টনের মতো। গোটা জায়গা না আটকালে ওগুলো বসানোর ঝুঁকি নেওয়া যায় না।”
অর্ধসমাপ্ত উড়ালপুল ছাড়াও রয়েছে আরও কয়েকটি সমস্যা। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রের খবর, নাগেরবাজার মোড়ে দু’টি অটোস্ট্যান্ড কিংবা কলেজের সামনে বাসস্ট্যান্ডের জন্যও নিত্য যানজট বাড়ছে। রাস্তার ধারে রয়েছে মোটরগাড়ি মেরামতের দোকানও, সেখানে আসা গাড়িও রাস্তার খানিকটা জুড়ে রাখে। স্থানীয় নিত্যযাত্রী মানিক ভট্টাচার্যের কথায়, “দমদম সেন্ট্রাল জেল এলাকা থেকে অটোয় উঠলে কখন গিয়ে নাগেরবাজার পৌঁছব, তার কোনও ঠিক নেই। কারণ, দু’দিকে বাস মুখোমুখি হয়ে গিয়ে প্রায়ই রাস্তা আটকে যায়। তখন অপেক্ষা করা বা হেঁটে চলে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না।”
তবে শুধু যানজটই নয়, উড়ালপুল তৈরি করতে গিয়ে যশোহর রোডের ওই অংশে কার্যত রাস্তা বলতে আর কিছু নেই। ভাঙা রাস্তা এবং নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের ধুলোয় প্রাণ ওষ্ঠাগত এলাকার বাসিন্দাদের। যশোহর রোডের একটি বহুতলে থাকেন গৌতম বালা। তাঁর কথায়, “বারান্দায় দাঁড়ানো দূর অস্ৎ, এখন জানলা খুলতেই ভয় হয়।” ধুলোয় মাঝেমধ্যেই শ্বাসকষ্টে ভুগতে হয় বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
উড়ালপুলের কাজ শেষ হচ্ছে না কেন?
ওই উড়ালপুল নির্মাণের দায়িত্বে থাকা হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স জানিয়েছে, যে নির্মাণ সংস্থাকে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল, তারা ঠিক মতো কাজ করেনি। ফলে যে সময়সীমা ধরে কাজ শুরু হয়েছিল, তা ধরে রাখা যায়নি। এইচআরবিসি-র ভাইস চেয়ারম্যান সাধন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই সংস্থার বিরুদ্ধে নিয়মমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জানুয়ারির মধ্যে ভিস্যুয়াল স্ট্রাকচার তৈরি হয়ে যাবে।” তবে সংস্থা সূত্রের খবর, কিছু প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্যও কাজে দেরি হয়েছে। যার জেরে ভিতের কাজ-সহ নানা নকশায় অদলবদল করতে হয়েছিল।
তৈরি সেতুর উপর দিয়ে কবে গাড়ি চলতে পারবে? নির্মাতা সংস্থার কর্তার উত্তর, “সেটা তো ঠিক করবে সরকার। তবে, কাজ ঠিকমতো করতে পারলে জানুয়ারিতেই শেষ হয়ে যাবে।” |