আর ‘না’ করতে পারলেন না। রবিবার পুলিশ লক-আপের ‘পানসে’ খাবারই মুখে তুলতে হল আমরি হাসপাতালের ধৃত ছয় কর্তাকে।
শুক্রবার, হাসপাতালে আগুন লাগার দিনই আমরির সাত কর্তাকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। চিকিৎসার জন্য এক জন, রাধেশ্যাম অগ্রবাল একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। বাকি ছ’জনের আপাতত ঠিকানা লালবাজারের ‘সেন্ট্রাল লক-আপ’। শনিবার দুপুরে লক-আপের খাবার মুখেও তোলেননি তাঁরা। বরং জেরার সময় গোয়েন্দা বিভাগে বসে খেয়েছিলেন বাড়ি থেকে দেওয়া ‘ভাল’ খাবার।
রবিবার সেটা হল না। শুকনো-মোটা রুটি, ট্যালট্যালে ডাল আর সব্জি দিয়েই তাঁরা ‘লাঞ্চ’ সারতে বাধ্য হলেন এই ছয় কয়েদি। বস্তুত, শুক্র ও শনিবারের পরে রবিবারের ‘ছুটির দিন’টাও ওই ছ’জনকে লক আপ-এর ‘কড়া’ নিয়ম মেনেই কাটাতে হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
আমরি কাণ্ডের পরে এস কে তোদি, আর এস গোয়েন্কা, মণীশ গোয়েন্কা, রবি তোদি এবং ডি এন অগ্রবালহাসপাতালের এই ছ’জন কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবারই তাঁদের আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মণীশ ও প্রশান্ত ছাড়া বাকি চার জনই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে ডি এন অগ্রবালের শরীর সব থেকে খারাপ। শনিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে স্বাস্থ্য-পরীক্ষার পরে চিকিৎসক তাঁদের জন্য যে ‘প্রেসক্রিপশন’ লিখে দিয়েছিলেন, তা মেনেই ওই চার জনকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সেন্ট্রাল লক-আপের পুলিশকর্মীরাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর সে-সব ওষুধ দিচ্ছেন তাঁদের। শনিবার স্বাস্থ্য-পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার আগে লক-আপে যে খাবার তাঁদের দেওয়া হয়েছিল, সে সব অবশ্য তাঁরা খাননি। ওই দিন ‘নৈশভোজ’ও প্রত্যাখ্যান করেন কয়েদিরা।
এ দিন দীর্ঘ ক্ষণ গোয়েন্দা বিভাগে বসিয়ে জেরা করা হয় ওই ছ’জন ধৃতকে। পাশাপাশি ঢাকুরিয়া আমরি-র ‘প্রশাসনিক’ কাজের সঙ্গে যুক্ত এক মহিলা-সহ দু’জনকে এ দিন লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয় বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই দুই কর্মীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ঘটনার দিন কখন, কার কাছ থেকে, ঠিক কী খবর পেয়েছিলেন তাঁরা। সেই খবর পেয়ে তাঁরা আর কার সঙ্গে কখন যোগাযোগ করেছিলেন, সে সব ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হয় তাঁদের। পুলিশের কাছে তাঁরা যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেগুলি হুবহু নথিবদ্ধ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন এ দিন বলেন, “ঘটনার সময় হাসপাতালে ভর্তি যে সব রোগী এই মুহূর্তে কথা বলার মতো অবস্থায় রয়েছেন, তাঁদের বক্তব্য শোনা হচ্ছে। একই ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানকেও।” প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটে নাগাদ আগুন লেগেছিল। |