শুক্রবার বেলা বাড়তেই ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হতে শুরু করেছিল যাদবপুরের রিজেন্ট এস্টেট, গাঁধী কলোনি, বিজয়গড়-রানিকুঠি, বিদ্যাসাগর উপনিবেশের মতো বিভিন্ন পাড়া। কারণ, আমরি-কাণ্ড ছিনিয়ে নিয়েছে ওই এলাকারই চার জন বাসিন্দার প্রাণ।
যাদবপুরের বিদ্যাসাগর উপনিবেশের বাসিন্দা ছিলেন স্বপনকৃষ্ণ ঘোষ। কাজ করতেন বাসন্তীদেবী কলেজে। গত বুধবার সকালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য তাঁকে ভর্তি করানো হয় ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে। পরিবার সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এর পরেই আইসিসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালেই ছিলেন স্বপনকৃষ্ণবাবুর পরিজনেরা। গভীর রাতে আগুন লাগার পরে তাঁরা আর বার করে আনতে পারেননি স্বপনকৃষ্ণবাবুকে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটিকে হারিয়ে এখন কার্যত দিশাহারা তাঁর স্ত্রী এবং দুই নাবালক সন্তান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন স্বপনবাবু। বৈদ্যুতিক সামগ্রী ভাড়া দেওয়ার ব্যবসাও ছিল তাঁর।
গত বুধবারই রিজেন্ট এস্টেটের দীপ্তি রায় ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন ঢাকুরিয়ার আমরি-তে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮১ বছরের ওই বৃদ্ধা আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্যানসারেও। চিকিৎসকেরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, শুক্রবারই ছুটি দিয়ে দেওয়া হবে তাঁকে। কিন্তু সেই ছুটি যে এমন হয়ে যাবে, তা এখনও মানতে পারছেন না ওই বৃদ্ধার মেয়ে এবং পূত্রবধূ। বছর দশেক আগে গাড়ি-দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর একমাত্র পুত্র।
রিজেন্ট এস্টেটের অদূরেই গাঁধী কলোনি। আমরি কেড়ে নিয়েছে এই এলাকার বাসিন্দা পূর্ণিমা রায়চৌধুরীকেও। দিন কয়েক আগে মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে ঢাকুরিয়ার ওই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পূর্ণিমাদেবীর ছেলে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী বলেন, “শুক্রবার সকালে আমার এক সহকর্মীর স্ত্রী ফোন করে আগুন লাগার খবর দেন। শুনেই ছুটে গিয়েছিলাম।” কিন্তু দিনভর তন্নতন্ন করে খুঁজেও মায়ের কোনও খবর পাননি অনিরুদ্ধবাবু। পরে সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে মায়ের মৃতদেহ খুঁজে পান তিনি। অনিরুদ্ধ জানিয়েছেন, বাবা মারা গিয়েছেন অনেক দিন। অভিভাবক বলতে ছিলেন মা-ই। সুস্থ হতে গিয়ে কী ভাবে এই ঘটনা ঘটে গেল, তা এখনও ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।
গাঁধী কলোনির পাশাপাশি দু’টি পাড়া, রিজেন্ট প্লেস আর বিজয়গড়। মৃত্যু থাবা বসিয়েছে সেখানেও। বছর কয়েক আগে রিজেন্ট প্লেসের বাড়ি থেকে বিবাহ সূত্রে বিজয়গড়ে গিয়েছিলেন পরমা চক্রবর্তী। পরিবার সূত্রের খবর, মেনিনজাইটিসের চিকিৎসা করানোর জন্য বৃহস্পতিবার ওই গৃহবধূকে ঢাকুরিয়ার আমরি-তে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার ৩৩ বছর বয়সী সেই মেয়েই ফিরল মৃতদেহ হয়ে।
এলাকার চার বাসিন্দার এমন মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। এখন তাঁদের একটিই দাবি, দোষীদের যেন শাস্তি হয়। |